সিবিএন ডেস্কঃ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আটদলীয় জোটের নেতা নাফতালি বেনেট। দুই বছরের জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন বেনেট। প্রধানমন্ত্রী মেয়াদের বাকি দুই বছর দায়িত্ব পালন করবেন জোটের অপর নেতা ইয়াইর লাপিড। বিবিসির খবরে এমনটি বলা হয়েছে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারসহ লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমাতে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন নাফতালি বেনেট।

গতকাল রোববার দেশটির পার্লামেন্টে নেসেটে আস্থাভোটে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছরের শাসনের অবসান ঘটলো। নেতানিয়াহুবিরোধী সরকার ১২০ আসনের পার্লামেন্টে মাত্র এক আসনে এগিয়ে সরকার গঠন করছে। এর মধ্য দিয়ে শুধু নেতানিয়াহুর শাসনের অবসান নয়, দুই বছরে চারটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া ইসরাইলের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটলো।
জোটের শর্ত অনুসারে, ইয়ামিনা পার্টির নেতা নাফতালি বেনেট ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবেন। এরপর তিনি ইয়েশ আতিদ পার্টির নেতা ইয়াইর লাপিদের কাছে বাকি দুই বছরের জন্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।
ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী লিকুদ পার্টির প্রধান বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে পার্লামেন্টে থাকছেন।
রোববার জেরুসালেমে নেসেটে আস্থা ভোটে মাত্র একটি ভোট কম পেয়ে পরাজয়ের পর নাফতালি বেনেটের কাছে গিয়ে তাঁর সঙ্গে হাত মেলান নেতানিয়াহু। ১২০ সদস্যের মধ্যে ৬০ জন নতুন জোটে আস্থা রাখেন আর ৫৯ জন ছিলেন নেতানিয়াহুর পক্ষের। বাকি একজন নেসেটে অনুপস্থিত ছিলেন। নেতানিয়াহু পরে বক্তৃতায় দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে বলেন, ‘আমরা আবার ফিরে আসব।’
৪৯ বছর বয়সী নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বলেন, ‘আজ কোনো শোকের দিন নয়। গণতন্ত্রে একটি সরকারের পরিবর্তন হয়েছে শুধুমাত্র, এতটুকুই। আজ রাতে যারা বিজয় উদযাপন করবেন, আমি তাদেরকে বলব, অন্যের বেদনার দিনে উল্লাস নৃত্য করবেন না। আমরা একে অপরের শত্রু নই, আমরা এক জনগোষ্ঠী।’

২ জুন ইসরায়েলের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে সরাতে আটটি দল জোট গঠনে ঐক্যবদ্ধ হয়। সময়সীমা শেষের আধা ঘণ্টা আগে তারা তাদের ঐক্যমতের নথি জমা দেন।
নতুন সরকারের জোটে যে আটটি দল রয়েছে—
১. ইয়েশ আতিদ (মধ্যপন্থি), নেতা : ইয়াইর লাপিদ (১৭টি আসন)
২. কাহোল লাভান (নীল ও সাদা) (মধ্যপন্থি), নেতা : বেনি গান্টজ (আটটি আসন)
৩. ইসরায়েল বেইতেইনু (মধ্য-ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী), নেতা : আভিগদর লিবারম্যান (সাতটি আসন)
৪. লেবার (সোশ্যাল-ডেমোক্র্যাটিক), নেতা : মেরাভ মিকায়েলি (সাতটি আসন)
৫. ইয়ামিনা (ডানপন্থি), নেতা নাফতালি বেনেট (সাতটি আসন)
৬. নিউ হোপ (মধ্য ডান থেকে ডানপন্থি), গিদিওন সা’র (ছয়টি আসন)
৭. মেরেৎজ (বাম, সোশ্যাল-ডেমোক্র্যাটিক), নেতা নিৎজান হোরোউইৎজ (ছয়টি আসন)
৮. রাম (আরব ইসলামপন্থি), নেতা : মানসুর আব্বাস (চারটি আসন)
১২০ আসনের মধ্যে আটদলীয় জোটের ৬২ জন পার্লামেন্টারিয়ান থাকলেও গতকালের আস্থা ভোটে ৬০ জনের ভোট পেয়েছে জোট। মতাদর্শগত দিক থেকে জোটবদ্ধ দলগুলোর মধ্যে মিল একেবারেই কম। এ কারণে সবার ধারণা ছিল এমন জোটগঠন প্রায় অসম্ভব। তবে নেতানিয়াহুকে সরাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন তাঁরা।
তবে এই জোটের কাছ থেকে সরকার পরিচালনার নীতির দিক থেকে বা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশি কিছু আশা করা ঠিক হবে না, তারা কেবল নেতানিয়াহুকে সরাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক জেরেমি বাওয়েন।