বার্তা পরিবেশক :

দখলবাজ, চাঁদাবাজ, মাদকাসক্তদের নিয়ে সিন্ডিকেট নির্ভর রাজনীতি করাসহ দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির অভিযোগ এনে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা, পৌরসভা, পেকুয়া উপজেলা ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগ।

এই দাবিতে শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরের থানা রাস্তার মাথার বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ কর্নারে প্রতিবাদ সমাবেশ, মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী দলের নেতারা সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যে উপরোক্ত দাবি তুলেন। কর্মসূচীতে হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।

চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি (জেলা কর্তৃক অব্যাহতিপ্রাপ্ত) জাহেদুল ইসলাম লিটুর সভাপতিত্বে ও উপজেলার প্রচার সম্পাদক আবু মুছার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (জেলা কর্তৃক অব্যাহতিপ্রাপ্ত) জাফর আলম। এ সময় বক্তব্য দেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিপিপি চকরিয়া উপজেলার সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা, সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল, পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, পেকুয়ার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ওয়ালিদ মিল্টন, তপন কান্তি দাশসহ দলের তিন উপজেলা ও পৌরসভা, ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিটের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ।

সন্ধ্যায় জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। তিনি লিখিত বক্তব্যে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগকে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে একটি নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত কমিটি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তিনি বলেন, বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ কমিটির অনেকেই মাদকাসক্ত। সন্ধ্যার পর থেকে তারা বেঘোরে থাকেন। সরকারের একজন সিনিয়র সচিবের যোগসাজসে পানি শোধানাগার প্রকল্পে তার কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির কারণে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। চাঁদা না দেওয়ায় অনেক হোটেল জবর-দখল করে রেখেছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।

চকরিয়া, পেকুয়া ও মাতামুহুরী উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমপি জাফর আলম স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রতি ছয়টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে (১) মেয়াদোত্তীর্ণ কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে পুনর্গঠন (২) জনপ্রিয় নেতাদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে অব্যাহতি সম্বলিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারপূর্বক ক্ষমা চাইতে হবে। (৩) কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া ও মাতামুহুরী উপজেলা ও চকরিয়া পৌরসভাসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিটে জেলা আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টিকারী সিন্ডিকেট রাজনীতির অবসানকল্পে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। (৪) জনপ্রিয় নেতাদের অগঠনতান্ত্রিকভাবে হটিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব সৃষ্টির প্রবণতা বন্ধ করতে হবে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে কেন্দ্রে তালিকা প্রেরণ ও মনোনয়ন দেওয়ার নামে অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। (৫) কক্সবাজার পৌরসভার পানি শোধানাগার প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে দুদকের চলমান তদন্তে মেয়র মুজিবসহ যাদের এসেছে তাদের শাস্তি নিশ্চিতকল্পে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। (৬) দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনে মেয়র মুজিবুর রহমানের দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ছয়টি দাবি ছাড়াও এমপি জাফর আলম লিখিত বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে পুনর্গঠন করে জেলাবাসীকে দখলবাজ, চাঁদাবাজ, মাদকাসক্তদের হাত থেকে মুক্তি প্রদানে দলীয় হাইকমাণ্ডের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

উল্লেখ্য, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াসহ নানা অভিযোগ এনে জেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক গত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমকে দলের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়াসহ দলের সাধারণ সদস্য পদ থেকে চুড়ান্তভাবে বহিষ্কার করতে কেন্দ্রের সুপারিশ প্রেরণ করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে বারোটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৩৯ কিলোমিটার এবং পেকুয়া, মাতামুহুরী উপজেলায়ও অবরোধ করে ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। পরে এমপির নির্দেশে দলীয় ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে বাড়ি ফেরে।