মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বান মরদেহবাহী এ্যাম্বুলেন্স হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান থেকে মঙ্গলবার ৮ জুন সকাল ১১ টার দিকে কক্সবাজারের দিকে রওয়ানা দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আমিরাটস এয়ারলাইন্সের একটি কার্গো বিমান যোগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানের মৃতদেহ মঙ্গলবার সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছে। সেখানে কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, মরহুমের ছোট ভাই গোলাম রহমান, মরহুমের ছোট মেয়ে সাজিয়া আফরীন রাহী’র স্বামী আরিফুল আলম শোভন লাশ গ্রহণ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানের মৃতদেহ তাঁর গ্রামের বাড়ি চকরিয়ার ভেওলা মানিকচর গ্রামে আনা হবে।

মঙ্গলবার ৮ জুন এশারের নামাজের পর চকরিয়ার ভেওলা মানিকচর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হবে। সেখানে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে বেতুয়াবাজারে বায়তুল মামুর জামে মসজিদের পাশে কবরস্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে বলে জানিয়েছেন-মরহুমের জামাতা, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম সজীব।

বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বান এর মরদেহ দেশে আনতে তাকে যাঁরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন তাদের সবার প্রতি ড.আশরাফুল ইসলাম সজিব কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বান এর জানাজায় করোনার প্রকোপ আবার বেড়ে যাওয়ার কারনে যারা বয়স্ক, অসুস্থ তাদের উপস্থিত না হতে মরহুমের কন্যা ডাঃ নাজিয়া আফরীন তাহী এবং সাজিয়া আফরীন রাহী সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। স্ব স্ব জায়গায় উপস্থিত থেকে তাদের গর্বিত পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানের আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া কামনা করেছেন তাঁরা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বান (৭৭) শুক্রবার ৪ জুন বিকেল ৪ টার দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজার মোহাম্মদ বিন জায়েদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি–রাজেউন)।

নির্লোভ, নিরংহকার রাজনীতিবিদ গোলাম রব্বান কিছুদিন ধরে তাঁর দুবাই প্রবাসী কন্যা নাজিয়া আফরিন তাহির সঙ্গে দুবাইয়ে বসবাস করছিলেন। সেখানে তিনি চেস্ট ইনফেকশন, কিডনি সমস্যা সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। গত ৩০ মার্চ একাত্তরের রনাঙ্গনের এই বীর সেনানী গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজা শহরের মোহাম্মদ বিন জায়েদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শুক্রবার সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।

অদম্য সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী গোলাম রব্বান মহান মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলে বিএলএফ’র কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এক নম্বর সেক্টরে গেরিলা যুদ্ধের অন্যতম সমন্বয়কারী ছিলেন।

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ গোলাম রব্বান ১৯৪৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ভেওলা মানিকচর (বিএমচর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত জেবর মুল্লুকের সন্তান। তিনি দুই কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক।

তিনি ষাটের দশকে রাজপথ কাঁপানো একজন ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) এর কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন তিনি। তিনি ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম মুজিব বাহিনীর কমান্ডিং কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য, কক্সবাজার জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন-একাত্তরের দেশপ্রেমিক এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

বিশিষ্ট সংগঠক গোলাম রব্বান কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্ঠা ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সফলভাবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বান বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকাকালীন সময়ে ১৯৬৭ সালে স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ত্যাগী এই রাজনীতিবিদ। এসময় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন তিনি।