অনলাইন ডেস্ক: মাওলানা মামুনুল হকসহ বিভিন্ন মামলায় আটক নেতাদের বাদ দিয়েই কমিটি ঘোষণা করতে যাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। প্রায় ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিতে আমির হিসেবে থাকছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদীকে মহাসচিব করে এই কমিটি চূড়ান্ত হয়েছে। আহমদ শফীর ছোট ছেলে আনাস মাদানীকে বাদ দেওয়া হলেও কমিটিতে আছেন বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ মাদানী।
সোমবার (৭ জুন) ঢাকায় খিলগাঁওয়ে মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদীর মাদ্রাসায় এই কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। অন্যদিকে শফীপন্থীরাও বিকল্প কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনের বিরোধিতা করে সংগঠনের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে সহিংসতার চালায় হেফাজত। সে সময়ে সরকারি অফিস, স্থাপনা ধ্বংসের পাশাপাশি অন্তত ১৭ জনের প্রাণহানি হয়। এরপর ঢাকা মহানগর হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ডের পর নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ১১ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন মামলায় হেফাজতের নেতাদের গ্রেফতার শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আলোচিত হেফাজত নেতাদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মামুনুল হক, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মনঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলামাবাদী, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হারুন ইজহার, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমেনী, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াস, কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহ, ঢাকা মহানগর হেফাজতের সহ-সভাপতি মাওলানা কোরবান আলী, ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমেদ প্রমুখ।
এমন পরিস্থিতিতে ২৬ এপ্রিল রাতে জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। আর তার কয়েক ঘণ্টা পর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা আসে। তখন থেকেই হেফাজত নেতারা বলে আসছিলেন শিগগির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
হেফাজতের পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি খসড়া বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। সেখানে হেফাজতের কমিটিতে আছেন, আমির মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী। নায়েবে আমির ১১ জন। তারা হলেন, মাওলানা আতাউল্লাহ হাজেজ্জী, মাওলানা আবদুল হক মোমেনশাহী, মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী (দেওনা পীর), মাওলানা মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ি, সিলেট), মাওলানা ইয়াহইয়া (হাটহাজারী মাদ্রাসা), মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ মাদ্রাসা), মাওলানা উবায়দুর রহমান মাবহবুব (বরিশাল), মাওলানা জসিমুদ্দীন (হাটহাজারি মাদ্রাসা), মাওলানা মুহাম্মদ আইয়ূব বাবুনগরী, মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী।
যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে আছেন ৫ জন। তারা হলেন, মাওলানা সাজেদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা আব্দুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা আরশাদ রহমানী (বসুন্ধরা), মাওলানা লোকমান হাকিম (চট্টগ্রাম), মাওলানা আনোয়ারুল করীম (যশোর)।
সহকারী মহাসচিব ২ জন। তারা হলেন মাওলানা আবু তাহের নদভী (পটিয়া), মাওলানা ইউসুফ মাদানী (শফীপুত্র)। সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরিস (চট্টগ্রাম)।
সহকারি সাংগঠনিক সম্পাদক ২ জন। তারা হলেন মাওলানা মাসউদুল করীম (গাজীপুর), মাওলানা শামসুল ইসলাম জিলানী (কুমিল্লা)। অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আলী মেখল। সহ অর্থ সম্পাদক ২ জন। তারা হলেন মাওলানা হাবীবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট), মাওলানা কিফায়াতুল্লাহ আজহারী (উত্তরা, ঢাকা)। প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী (সাভার), সহ প্রচার সম্পাদক মাওলানা খোবাইব (জিরি)।
দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান (উত্তরা, ঢাকা)। সহ দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ওমর ফারুক। ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া মাদানী (চট্টগ্রাম)।
সদস্য আছেন ৭ জন। তারা হলেন, মাওলানা মুবারক উল্লাহ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা ফয়জুল্লাহ (মাদানী নগর পীর), মাওলানা মুশতাক আহমদ (খুলনা), মাওলানা রশীদ আহমদ (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা আনাস (ভোলা), মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী।
হেফাজতের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, হেফাজতের আমিরসহ অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। হেফাজত নিয়ে বিতর্ক এড়াতে এবং সরকারের চাপমুক্ত থাকতে বিভিন্ন মামালায় আটক হওয়া নেতাদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নাম রয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মীর ইদ্রিসের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা মুরুব্বিরা ঠিক করবেন। যে তালিকা এসেছে দেখা যাবে ওটা ঠিক নেই।’ আপনি তো এই তালিকায় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আছেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, মুরুব্বিরা আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন, আমি সেটাই পালন করার চেষ্টা করবো।’
এদিকে হেফাজতের শফপন্থীরাও একটি কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আহমদ শফীর ছোট ছেলে আনাস মাদানীসহ হেফাজতের পদত্যাগী নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। ১০ মে তারা আহমদ শফীর স্মরণে অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শফীপন্থীদের কমিটিতে আমির হিসেবে আসতে পারেন মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ। তিনি কিছুদিন আগে বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই, আহ্বায়ক কমিটির প্রতিও তার সমর্থন নেই। বিবৃতির সত্যতা নিশ্চিত করলেও কমিটির বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
– বাংলাট্রিবিউন
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।