ইউসুফ আরমান

প্রতিদিন সমাজে অনেক অন্যায় ও অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে। বর্তমানে আমাদের দেশ ও সমাজে অন্যায় এমনভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে যে, আদর্শ ও বিবেকবান ব্যক্তিদের অনেকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অবস্থান গ্রহণে সাহসী হয়ে ওঠে না। অন্যায়ের প্রতি সরাসরি প্রতিবাদ না করা ও মৌন সমর্থনও অন্যায়। নীতিনৈতিকতা ও বিবেকের তাড়নায় একজন আদর্শ ও বিবেকবান ব্যক্তির অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া দায়িত্ব হলেও বর্তমানে এ দায়িত্ব পালনে অনেকেই সচেষ্ট নন।

“যেখানে অন্যায়-অপরাধ-দখলবাজদের আঁকড়া
সেখানে হাজির মানব দরদী প্রতিবাদী অগ্নিকন্যা”

প্রীতিলতার মত নাজনীন সরওয়ার কাবেরী একটি বিপ্লবী প্রতিবাদী কন্ঠের নাম। বাঙালি নারীকে তিনি শিখিয়ে দিচ্ছেন নারীরাও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে, কি করে হার না মেনে চালিয়ে যেতে হয় জীবন। এক জন্মের কর্মে কেমন করে থেকে যেতে হয় মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। বাঙালি নারী চিরকাল কেবল অবলা নয়। যে বাঙালি নারী আজীবন গৃহের কোণে থাকে কেবলই সাংসারিক কাজকর্ম ও সন্তান লালন পালনেরই মধ্য দিয়ে সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেতে হয়। সেই নারীকে তিনি চিনিয়ে দিচ্ছেন সমাজের জন্য ও দেশের জন্য, বিপ্লবের জন্য একটি জীবনকে কতোখানি মহিমান্বিত করা যায়। কি করে গর্জে ওঠা যায় শোষকের বিরুদ্ধে, অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে, দখলবাজদের বিরুদ্ধে। তাই তো তিনি অগ্নিকন্যা।

বাংলাদেশের একজন কূটনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে এমএনএ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচিত সংসদ সদস্য মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ও রওশন সরওয়ার আলম চৌধুরীর অগ্নিকন্যা নাজনীন সরোয়ার কাবেরী। এই মেয়েটিই যে একদিন প্রচণ্ড সাহসিকতার সঙ্গে সমাজ ও দেশের জন্য জীবন বাজি রাখবে তা ক’জনে ভেবেছিল।

বেশ কিছু দিন ধরে ঘটনা প্রবাহ দেখি, তবে আমাদের চোখে কী ধরা পড়ে? যদি আমাদের চোখে ছানি না পড়ে থাকে। স্থানীয় রাজনীতির কলুষতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং তা ধরে রাখার অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অর্থের দৌরাত্ম, পেশীশক্তির মহড়া, আইনের শাসনের অভাব, জবাবদিহির অভাব, ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রভাব আরও অনেক কিছু। কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে একজন মানুষ জীবনে কোন ধরনেরই উপকার পায় না। তার কারণ হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া আর মৃত্যুকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে দাওয়াত দেয়া সমান কথা ।

দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন প্রতিটি সরকারের দায়িত্ব। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের জন্য চাই আইনের শাসন। পরিবার-পরিবেশে জনমতের প্রতিফলনে যারা অধিষ্ঠিত হন তাদের পক্ষে সুশাসন নিশ্চিত করা সহজ। সুশাসন নাগরিকদের জন্য যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবিধান ও প্রতিবাদ নিশ্চিত করলেও দুঃশাসন যে এর বিপরীত তা সময় ও কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

সব দেশেই বিচার বিভাগকে বলা হয় জনগণের শেষ ভরসাস্থল। জনমানুষের অধিকার হরণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলেও এ ধরনের বিচারক দিয়ে যারা অন্যায়ের শিকার হয়েছেন এরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও আনুকূল্য ভোগের কারণে ভুক্তভোগীদের এদের বিরুদ্ধে প্রতিকারহীন অবস্থায় আক্ষেপ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। কাজেই বিচারহীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে আলো প্রজ্জলিত করা হোক অন্ধকার সমাজে।

কক্সবাজারে নাজনীন সরওয়ার কাবেরী একজন বিপ্লবী চেতনার যে বিশ্বাস জন্ম দিয়েছেন তা যুগ যুগ ধরে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে মানুষকে প্রেরণা যোগাবে। যা আজও প্রবাহমান। কারণ বিপ্লবের মৃত্যু কখনো হয় না। মানুষের মনে নাজনীন সরওয়ার কাবেরী অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন।