সিবিএন ডেস্ক:
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভোলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, কক্সবাজারের নিচু এলাকা ও চরাঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। জোয়ারের পানিতে বরিশাল, বরগুনা ও বাগেরহাটে শিশুসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

ইয়াসের প্রভাবে দেশে আরো কয়েকদিন বৈরী আবহাওয়া থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বাংলাদেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়ার এক সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অধিদফতর এ তথ্য জানিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বুধবার সকাল থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। উত্তাল হয়ে ওঠে সমুদ্র। বাড়তে থাকে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। বাগেরহাটের শরণখোলা ও রামপালের নিচু এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের একটি হরিণ মরে ভেসে এসেছে লোকালয়ে। জোয়ারে শরণখোলার সাউথখালীতে ভেঙ্গেছে বাঁধ। প্লাবিত ইউনিয়নের বগী, খুরিয়াখালী, তেরাবেকা, সোনাতলা গ্রাম। পানিবন্দি প্রায় এক হাজার পরিবার।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরার খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ ও মালঞ্চ নদীর পানি বেড়েছে। জোয়ারে শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, কৈখালি, মুন্সিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে।

জোয়ারের পানি চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতায় বেড়ে যাওয়ায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটার নিজামপুর, দেবপুর, রাঙ্গাবালীর চর মোন্তাজ, চর বাংলাসহ কয়েকটি বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। বাড়িঘরসহ তলিয়ে গেছে অর্ধশত মাছের ঘের। ভোলায় ঝড়ো হাওয়ায় অনেক জায়গায় গাছপালা উপড়ে গেছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয় চরফ্যাশন, ঢালচর, চর পাতিলা ও চর কুকরি-মুকরিসহ বেশকিছু গ্রাম।

ইয়াসের প্রভাবে বিপদসীমার ওপরে বইছে বরগুনার পায়রা, বিশখালী ও বলেশ্বর নদের পানি। অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে গেছে সদরের বালিয়াতলী, ঢালভাঙ্গাসহ অন্তত ২০টি গ্রাম। এছাড়া, পাথরঘাটার পদ্মা এলাকায় বেঁড়িবাধ ভেঙে পানিবন্দি বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা।

খুলনা উপকূলে বাতাসের তীব্রতা বাড়ার পাশাপাশি থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। পানির তীব্র তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হওয়ার আতংকে আছেন উপকূলবাসী। কয়রায় তিনটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পানিবন্দি রয়েছেন বরিশালের বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ। বিভিন্ন স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে সড়ক, ফসলি জমি। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে প্রশাসন কাজ করছে জানিয়ে ভুক্তভোগীদের পৌঁছে দিচ্ছে খাদ্য সহায়তা।

জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারের উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।ঢেউয়ের তোড়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটিতে ভাঙন ধরেছে। সেন্টমার্টিনের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে কিছু এলাকা, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ ও সদর উপজেলার বেশকিছু এলাকা তলিয়ে গেছে।

ইয়াসের প্রভাবে অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় দেশের ৯ জেলার ২৭ উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সার্বিক ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এ কথা জানান। -ঢাকাটাইমস