সিবিএন ডেস্ক:
শেয়ারবাজারে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে তালিকাভুক্ত খুলনা পাওয়ারসহ ১০টি কোম্পানির সঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) মেয়াদ নবায়ন করা হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুরোধে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরকারের কাছে বিদ্যমান বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি পুনরায় নবায়ন না হলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়তো। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো কোম্পানিগুলো। যার ফলে ভুগতে হতো বিনিয়োগকারীদের। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এমন সিদ্ধান্তে কোম্পানিগুলো নতুন জীবন পেতে যাচ্ছে।

এই কোম্পানিগুলো হলো- ডেসকো, পাওয়ার গ্রিড, বারাকা পাওয়ার, ডরিন পাওয়ার, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার, জিবিবি পাওয়ার, খুলনা পাওয়ার, শাহজিবাজার পাওয়ার, সামিট পাওয়ার ও ইউনাইটেড পাওয়ার কোম্পানি লিমিডেট।

সরকারের সঙ্গে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তির মেয়াদ নবায়নের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমানের কাছে প্রস্তাব পাঠায় বিএসইসি। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে তেমন গুরুত্ব মেলেনি। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঙ্গে আলোচনা করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। ওই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শর্ত সাপেক্ষে শেয়াররবাজারে জ্বালানি খাতের ১০টি কোম্পানি থেকে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। অর্থাৎ সরকার তার প্রয়োজন মতো কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনবে। আর সেই অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করবে।

এর আগে চুক্তির মেয়াদ অনুযায়ী অগ্রিম টাকা দিয়ে একবারে বিদ্যুৎ কিনতো সরকার। এখন সেই সিদ্ধান্তে বদল এসেছে। এখন প্রয়োজন মতো যতটুকু বিদুৎ কিনবে, ততটুকুর জন্য সরকার টাকা দেবে। আর ওই কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা বেশি রয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে চুক্তি নবায়নের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে বলে জানা গেছে।

এদিকে, গত ১৫ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের কাছে বিএসইসির পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এ সব কোম্পানিতে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা পাওয়ার কোম্পানির মালিকানাধীন দুটি কোম্পানি খুলনা পাওয়ার কোম্পানি ইউনিট-২ ও খানজাহান আলী পাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে সরকার বা বিউবোর পিপিএ বাড়ানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। যার মেয়াদ পর্যায়ক্রমে চলতি বছরের ৩১ মে এবং ২৮ মে তারিখে শেষ হবে। এ পরিস্থিতিতে খুলনা পাওয়ার কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ লভ্যাংশ থেকে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফেরত আসেনি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এ কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কমিশন উদ্বিগ্ন। তাই খুলনা পাওয়ারসহ অন্যান্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির পিপিএ চুক্তি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নবায়নের সুযোগ রয়েছে কি না, তা জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে কমিশন।

এ বিষয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, শেয়ারবাজারের জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পিপিএ নবায়নের বিষয়ে বিএসইসি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেছে। কোম্পানিগুলোর পিপিএ নবায়ন করা সম্ভব হলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখ থেকে রক্ষা পাবে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কমিশন সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই। বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের ডিজি ভালো বলতে পারবেন।’

এদিকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ও ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সায়েদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, সরকারের সঙ্গে কোম্পানিগুলোর পুনরায় পিপিএ নবায়ন করা হলে ওই কোম্পানিগুলো কার্যক্রম বন্ধ হবে না। এতে কোম্পানিসহ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রেহাই পাবে। সরকার যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, শেয়ারবাজারে জ্বালানি ও বিদ্যুতখাতে তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির সঙ্গে সরকারের পিপিএর মেয়াদ নবায়ন করা হবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। তবে এমন সিদ্ধান্তের ঘোষণা এখনও আসেনি। এমনটা হলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিএসইসির ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার।