মোহাম্মদ ইলিয়াছ, লামা (বান্দরবান)
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবন্ধ প্রায় দেড় বছর ধরে । সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হয়তো সমস্যা থাকার কথা নই। কিন্তু বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কী অবস্থা কেউ কি উকি মেরে দেখেছে একবারও? না, দেখে নি বা দেখার সুযোগও হয়নি কারো।

বলছি বান্দরবানের লামা উপজেলার বেসকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আর্তনাদের কথা। করোনাকালে লকডাউনের যাতাকলে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পথে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারী, বে-সরকারী, জেলা পরিষদ বা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কোন অনুদানও পাইনি তারা। বেতন দিতে পারছে না শিক্ষকদের এমনকি কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘরভাড়াও বকেয়া রয়ে গেছে অনেক টাকা। ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে এই বিদ্যালয়গুলো।

বর্তমানে লামায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসাসহ প্রায় ৩০টিরও বেশি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো না পারছে শিক্ষকদের বেতন দিতে, না পারছে বিদ্যালয়ের ঘরের ভাড়া দিতে। কিভাবেই সামাল দিবে এই ক্ষতিগুলো? কারন শিক্ষার্থীদের বেতনেই চলে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন, ঘর ভাড়া এবং অন্যান্য খরচসমূহ।

একদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতনও নেওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছে,‘আমার সন্তান তো বিদ্যালয়েই যাই নি। কীভাবে স্কুলের বেতন নিবেন?’

অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচ্ছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তারা মন স্থির করেছে বিদ্যালয়ে আর চাকরি করবে না। কারন তারা বেতন পায় না। সব মিলিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এভাবে যদি চলতে থাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের লেখাপড়ায় ব্যাপকহারে ক্ষতির সম্মুখিন হবে বলে ধারনা করছে লামা উপজেলাবাসী।

লামার ফাইতং ইউনিয়নের আমতলীপাড়া মাওলানা মোঃ আব্দুল হাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু ইউসুফ জানায়, ‘খুব আশা নিয়ে অত্র বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কিন্তু এই করোনাকালীন সময়ে সব আশা যেনো নিরাশা হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছিনা। তাছাড়াও জেলা উপজেলা থেকেও কোন সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছিনা। অনেক টাকা শিক্ষকদের বেতন বকেয়াও রয়ে গেছে।’

লামার সরই ইউনিয়নের ধুইল্ল্যা পাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন জানায়, ‘এভাবে যদি চলতে থাকে বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। সরকারী, বেসরকারী, উপজেলা বা জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চাইলে বিদ্যালয়গুলোকে বাচিঁয়ে রাখতে পারে।’

আজিজনগর গালর্সস্কুলের প্রধান শিক্ষক আলী হোসেন তুষার বলেন,‘শিক্ষকদের বেতন তো দূরের কথা ঘর ভাড়ায় দিতে পারছি না। জানি না কপালে কি আছে।’

ফাঁসিয়াখালী গ্রামার স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলম বলেন, ‘এভাবে আর কতোদিন? না পারছি শিক্ষকদের বেতন দিতে, না পারছি ঘরভাড়া দিতে। বেতন দিতে পারিনি বলে শিক্ষকদের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না’

এ ব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজা রশিদ বলেন, ‘গত বছর করোনাকালীন সময়ে সরকার নন এমপিওদের জন্য কিছু বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু এই বছর কোন বরাদ্দ এখনো আসেনি। সামনে হয়তো বরাদ্দ আসতেও পারে। আসলে অবশ্যই দিবো সবাইকে।’

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, ‘বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দেখি কিছু করা যায় কিনা। চেস্টা করবো তাদের মুখে হাসি ফুটাতে। গত বছর বেশ কয়েকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো তবে এই বছর এখনো সম্ভব হয় নি।’

উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের লামা উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপচে পড়া ভীড়। একেকটা সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। যেখানে সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিজেদের শিক্ষার্থীদের পড়াতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে করোনার কারনে যদি একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের আলাদা চাপ নেওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়বে সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর। শিক্ষার্থী নিয়ে বিপাকে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে যদি বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তাই অত্র উপজেলায় বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম এবং টিকিয়ে রাখা খুবই জরুরী।