মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কক্সবাজার মহকুমা শাখার তৎকালীন প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নুর আহমদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার ১৫ মে। ২০১১ সালের আজকের এদিনে তুখোড় পার্লামেন্টেরিয়ান, কক্সবাজারের রাজনীতির অন্যতম পুরোধা এডভোকেট নুর আহমদ সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।

মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের এই বটবৃক্ষের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী করোনা পরিস্থিতিজনিত লকডাউন (Lockdown) এর কারণে এবছর আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হচ্ছেনা বলে সিবিএন-কে জানিয়েছেন-মরহুম এডভোকেট নুর আহমদের কৃতি সন্তান, কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহদুর। তবে আনুষ্ঠানিকতার অর্থ দিয়ে করোনায় সংকটে পড়া অসহায়, গরীব, দুঃস্থ মানুষকে সহায়তা, এতিমখানায় খাবার বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া মরহুমের গ্রামের বাড়ি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কচুবনিয়া গ্রামে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে খতমে কোরআন, দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। কক্সবাজার শহরের বাহারছরা জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে মরহুমের কবর জেয়ারত ও মসজিদে বিশেষ দোয়া’র কর্মসূচীও রয়েছে বলে জেলা যুবলীগের সভাপতি, কক্সবাজার-৪ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সোহেল আহমদ বাহদুর জানিয়েছেন।

যুবলীগ নেতা সোহেল আহমদ বাহাদুর তার গর্বিত পিতা এ অঞ্চলের রাজনীতি ও আইনঙ্গনের অতি পরিচিত মুখ মরহুম এডভোকেট নুর আহমদ’কে আল্লাতায়লা যাতে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা করে নেন, সেজন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেছেন।

এড. নুর আহমদ’র সংক্ষিপ্ত জীবনী :

কক্সবাজারের টেকনাফের কচুবনিয়ার নুরুদ্দীন মিয়াজির কনিষ্ঠ সন্তান হাজী সুলতান আহমদ সওদাগর ও রশিদা বেগম দম্পতির জ্যেষ্ঠ সন্তান নুর আহমদ। ১৯৩৮ সালে জন্ম নেয়া নুর আহমদ ১৯৫৪ সালে পেকুয়ার জি.এম.সি ইনষ্টিটিউট থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ এবং ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন। সেখানেই তাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৬০ সালে স্নাতক এবং ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কৃতিত্বের সাথে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠতা লাভ করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে ১৯৬৩ সাল হতে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১০ বছর কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় কক্সবাজারের প্রতিটি থানা ও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে সক্ষম হন দক্ষ সংগঠক এডভোকেট নুর আহমদ। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন লাভ করেন এবং নৌকা প্রতিক নিয়ে পকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কক্সবাজার মহকূমাতে প্রথম এমএনএ নির্বাচিত হন (বর্তমানের ৪টি আসন নিয়ে ১টি মহকূমা)।
উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনের সময় অন্যান্য এমএনএ বৃন্দ সহ তিনি সেই মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধান রচনায়ও তিনি উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন।

কর্ম জীবনে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ও সনামধন্য আইনজীবি। ১৯৬৬ সালে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতিতে একজন নবীন আইনজীবী হিসাবে যোগদানের মধ্যদিয়ে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু হয় এবং অতি অল্প সময়ে সুনাম অর্জনে সক্ষম হন। তিনি জেলা আইনজীবি সমিতির একাধিকবার সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতি ও আইনঙ্গনে কিংবদন্তিতুল্য বিস্ময়কর মেধাবী ও দূরদর্শী এই মানুষটি একজন সফল রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সমাজকর্মী হিসাবে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন আমৃত্যু।

ব্যক্তিগত জীবনে এডভোকেট নুর আহমদ টেকনাফের ঐতিহ্যবাহী, বুনিয়াদি জমিদার পরিবারের সন্তান বাহারছরা ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরীর কন্যা রাহিমা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এডভোকেট নুর আহমদ ও রহিমা খাতুন দম্পতি ২ পুত্র ও ৫ কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক ও জননী।

এড. নুর আহমদের মৃত্যু বার্ষিকীতে জেলা ও উপজেলা যুবলীগ নেতৃবৃন্দের বিবৃতি :

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, কক্সবাজার মহকুমা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমএনএ, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর, প্রথিতযশা আইনজীবী নুর আহমেদ’র ১০ম মৃত্যু বার্ষিকীতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও উপজেলা যুবলীগ নেতৃবৃন্দ।

এক যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণধারী এড. নুর আহমদ নীতি-নৈতিকতার সর্বোচ্চ অবস্থানে থেকে বৈষয়িক লোভ লালসা’র উর্ধে উঠে গণ-মানুষের আস্থার ঠিকানা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে এ জনপদে বঙ্গবন্ধুর সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন বাস্তয়নে সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক সংকটকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর পুরুষ এড. নুর আহমদের নীতি-আদর্শের লালন ও ধারণ করা সবার জন্য পাথেয়।

জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত এ নেতার ১০ম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে যাঁরা বিবৃতি দিয়েছেন, তাঁরা হলেন-জেলা যুুুুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেল, রামু উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া, কক্সবাজার পৌর যুবলীগের আহবায়ক শোয়েব ইফতেখার, যুগ্ম আহবায়ক ডালিম বড়ুয়া, আসাদ উল্লাহ, শাহেদ মোঃ এমরান, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন পুতু, সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল হক রিকো, চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কচির, উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মুজিবুল হক আজাদ, সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন, মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক সাজেদুল করিম, যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট শেখ কামাল, সেলিম উল্লাহ,

কুতুবদিয়া উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আবু জাফর ছিদ্দিক, যুগ্ম আহবায়ক সেলিম উদ্দিন লিটন, আরিফুল ইসলাম, টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আলম, সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন চেয়ারম্যান, পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বারেক, চকরিয়া পৌর যুবলীগের সভাপতি হাসানগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আজিজুল সোহেল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে মরহুম এডভোকেট নুর আহমদের আত্মার মাগফেরাত ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন যুবলীগ নেতৃবৃন্দ।