আবদুর রহমান খান:
আণবিক শক্তিধর ভারতে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা নিয়ে যখন গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত ঠিক তখন আর একটি আতঙ্কের খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম।

পারমানিক অস্ত্র এবং বিষ্ফোরক বানানোর কাজে ব্যবহার কর হয় এমন একটি অতিমাত্রার তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়ামের আট কেজি ওজনের বড় চোরাইচালান আটক করেছে মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাস-বিরোধী স্কোয়াড (এটিএস)। গত সপ্তাহে আটক করা এ পরিমাণ ইউরেনিয়ামের বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি রুপী। এ ঘটনায় জিগর পাণ্ডে এবং আবু তাহের নামের দু’জনকে আটক করা হয়েছে। গত বুধবার তাদেরকে আদালতে হাজির করে ১২ মে পর্যন্ত রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।

এটিএস কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে আটক দু’ব্যক্তি করোনাকালীন লকডাউনের মধ্যে ইউরেনিয়ামের চালানটি অনলাইনে বিক্রির চেষ্টা করছিল। সরকারী সংস্থাটির এজেন্ট ক্রেতা সেজে নমুনা সংগ্রহ কর এবং তা ভাভা আণবিক কেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য পাঠায় । সেখানে নিশ্চিত হয় যে এ পদার্থটি উঁচু মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা সম্পন্ন ইউরেনিয়াম যা মানব শরীরের জন্য মারারত্মক ক্ষতিকর।

এর পর পরই ইউরেনিউমের চালানসহ জিগর পাণ্ডে এবং আবু তাহেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে, ২০১৬ সালে এরকম তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়ামের ন’কেজি ওজনের আর একটি চোরাইচালান ধরা পরেছিল মহারাষ্ট্রের থানে এলাকা থেকে।

ভারতে ইউরেনিইয়াম সমৃদ্ধ খনিজ পদার্থ থেকে বাণিজ্যিকভাবে আহরণ করা হয় ইউরেনিয়াম । ধূসর রূপালী রঙের এ ধাতব পদার্থটি সাধরনভাবে পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়। অনেক ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয়তা রোধে এর ধাতব পাত ব্যবহার করা হয়। তবে সভ্যতার কলংক হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয় মারণঘাতি পারমানবিক অস্ত্র এবং বিস্ফোরক তৈরিতে ।

ভারতের অন্ততঃ ১১টি রাজ্য খনিজ ইউরেনিয়ামের মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে অন্ধ্র প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন মেঘালয় রাজ্যে রয়েছে বড় মজুদ।

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞগনের ধারনা ভারত থেকে চোরাইচালানের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করে জঙ্গী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত আল-কায়দা, আই এস বা ভারতীয় আর এস এস উগ্রবাদীরা ভয়ংকর বিষ্ফোরক বানাতে পারে।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা ( আই এ ই এ) – এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী ভারতে চোরাইচালানের ইউরেনিয়াম আটক হবার অর্থ হচ্ছে সেখানে এ তেজষ্ক্রিয় পদার্থটির সংরক্ষণ, পরিবহন এবং নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নিরাপত্তা ঘটতি রয়েছে।

২০১৯ সালে ভারতে তেজস্ক্রিয় পদার্থটির বেআইনি ব্যবহার, চোরাইচালান, এবং পাচারের ১৮৯ টি ঘটনা সনাক্ত করেছে আই এ ই এ ।

সর্বশেষ ঘটনা প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী সংস্থাকে উদ্ধৃত করে ৭ মে এক খবরে জনিয়েছে, আটক তাহেরের বাবার মালিকানাধীন মানখুর্দ এলাকায় ভাঙ্গাচোরা লোহা-লক্কড়ের একটি দোকান থেকে ইউরেনিয়ামের প্যাকেটটি উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় একটি কারখানার ধাতব বর্জ্য সমেত একটি বিকল ট্রাক দু-বছর আগে বাতিল মাল হিসেবে এ দোকানে বিক্রি করা হয়েছিল। তবে ট্রাকে থাকা ধাতব বস্তু অন্য ধাতুর চেয়ে আলাদা মনে হবার কারনে তাহের এটিকে আলাদা করে সংরক্ষণ করে এবং এর সঠিক পরিচয় এবং মূল্য জানার চেষ্টা করে। তার সহযোগী জিগর পাণ্ডের মাধ্যমে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তারা করোনাকালে অনলাইনে ক্রেতা খুঁজতে শুরু করে। আর তাতেই এটিএস এর জালে ধরা পরে যায়।

২০১৬ সালের ইউরেনিয়াম চোরাইচালান আটকের ঘটনায়ও জড়িত ছিল একজন লোহা-লক্কড় ব্যবসায়ী।

এ প্রসঙ্গে ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অনিল কাকরকার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, যে সব কারখানায় তেজস্ক্রিয়তা রোধে ইউরেনিয়ামের ব্যবহার রয়েছে তাদের এ বিষয়ে কমিশনকে অবহিত রাখা বাধ্যতামুলক। তাছাড়া এটা বর্জ্য হিসেবে বাতিল করতে হলেও তা কমিশনের কাছে পাঠানোর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা না করে সোজা পথে ভাংগারীর দোকানে বেচে দেওয়া হয়েছে।