মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার জেলায় প্রাণঘাতী করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত গত ১৩ মাসে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৭ জন। একই সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার জেলায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৯৫ জন। মৃতদের মধ্যে ১১ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী। অবশিষ্ট ৮৪ জন স্থানীয় নাগরিক। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ১’১৯%। এরমধ্যে গত ১৫ এপ্রিল হতে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত গত ১২ দিনে জেলায় মারা গেছে ১০ জন। গত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির সংখ্যা ছিলো মোট ৮৫ জন।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

সোমবার ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলা ৩ হাজার ৯২৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। যা জেলার মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রায় অর্ধেক। ৪১৩ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী সহ মোট ১ হাজার ২৬৯ জন করোনা রোগী নিয়ে উখিয়া উপজেলা দ্বিতীয় শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে। ১২১ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী সহ মোট ৭৫৭ জন করোনা রোগী নিয়ে টেকনাফ উপজেলা তৃতীয় শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে। ৬৬৭ জন করোনা রোগী নিয়ে চকরিয়া উপজেলা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। ৫৩০ জন করোনা রোগী নিয়ে রামু উপজেলা পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। ৫০০ জন করোনা রোগী নিয়ে মহেশখালী উপজেলা ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ২৫৭ জন করোনা রোগী নিয়ে পেকুয়া উপজেলা সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। ১০২ জন করোনা রোগী নিয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা অষ্টম অবস্থানে রয়েছে।

কক্সবাজার আরআরআরসি অফিসের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. তোহা ভুইয়া জানিয়েছেন, গত ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪ টি ক্যাম্পে থাকা ৩৭ হাজার ৭০০ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীর নমুনা টেস্ট করে ৫৩৪ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীর শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। তারমধ্যে, উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪১৩ জন এবং টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১১ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী মারা গেছে।

সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান এর দেওয়া তথ্য মতে, গত ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৬ হাজার ৪৭৮ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৮০’৯০%। একই সময়ে কক্সবাজারে কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত অসুস্থ রোগী রয়েছে ১ হাজার ৩৭৮ জন। এরমধ্যে, হোম আইসোলেসনে রয়েছেন ১ হাজার ১৭৯ জন, প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেসনে রয়েছেন ১৯৯ জন। তারমধ্যে, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেসনে রয়েছেন ৬১ জন, রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেসন হাসপাতালে রয়েছেন ১১ জন, চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেসন হাসপাতালে রয়েছেন ১৪ জন, কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বাহারছরা ফ্রেন্ডশিপ SARI হাসপাতালে রয়েছেন ১৮ জন, রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আইসোলেসন সেন্টার সমুহে রয়েছেন স্থানীয় জনগণ ৪২ জন এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী রয়েছেন ৫৩ জন।

এদিকে, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া জানিয়েছেন, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত সন্দেহজনক করোনা রোগীর নমুনা টেস্ট করা হয়েছে মোট ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭৮৭ জনের। তারমধ্যে, কক্সবাজার জেলার নাগরিকদের নমুনা ৭৮ হাজার ৯৫৪ জনের। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের নমুনা ৩৭ হাজার ৭০০ জনের। চট্টগ্রাম জেলার নাগরিকদের নমুনা ১১ হাজার ২৮৩ জনের এবং বান্দরবান জেলার নাগরিকদের নমুনা ৫ হাজার ৮৫০ জনের। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নমুনা টেস্ট টেস্ট শুরু হয় ২০২০ সালে ২ এপ্রিল হতে। এর আগে ঢাকার মহাখালী আইইডিসিআর এর ল্যাবে কক্সবাজারের নাগরিকদের নমুনা টেস্ট করা হতো। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের কোনার পাড়ার তুমব্রু ‘জিরু পয়েন্ট’ এর আবু সিদ্দিক নামক তাবলীগ ফেরত একজন নাগরিকের নমুনা টেস্ট রিপোর্ট সর্বপ্রথম ‘পজেটিভ’ করা শনাক্ত হয়। তবে ঢাকার মহাখালী আইইডিসিআর এর ল্যাব থেকে করোনার নমুনা টেস্ট করে চকরিয়ার খুটাখালীর মুসলিমা খাতুন নামক একজন বয়স্ক মহিলার কক্সবাজার জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়।

এদিকে, সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান সরকারের বিধিনিষেধ, স্বাস্যবিধি মেনে চলার উপর গুরত্বারোপ করে মাস্ক পরার জন্য সকল নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।