প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু

করোনার প্রথম ধাপের আক্রমণে প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু হলেও পর একদিনে শত জন করে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। করোনার দ্বিতীয় ধাপের আক্রমনে দিনে শতাধিক মানুষের অসহায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। করোনার করা প্রতিদিনের মৃত্যুর এই তালিকায় আমরা যে কেউ যেকোন দিন উঠে যেতে পারি।

লকডাউন শুরু হয়েছে। দফায় দফায় বাড়বে এই লকডাউন কোনো সন্দেহ নেই। কারণ করোনার দ্বিতীয় ধাপ আরো বেশি আক্রমনাত্মক হয়ে গেছে। সংক্রমণ বিস্তার রোধে আর অধিক মৃত্যুহার এড়াতে ঘরবন্দী জীবন যাপন করা ছাড়া আপাতত আর কোনো উপায় নেই। তাই জনস্বার্থে সরকার লকডাউন দিতে বাধ্য। আমার বিশ্বাস সরকার পরিস্থিতি না বুঝে এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া পারতপক্ষে লকডাউনের মত কঠোর নির্দেশনা দিতে যাবেনা। কারণ দেশ চালাতে গিয়ে শুধু একদিনের লকডাউন তথা রাষ্ট্রীয় অচল জীবনে কতখানি অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মূখীন হতে হয় সরকার তথা কর্তপক্ষ তা ভাল করে জানেন। অযথা লকডাউন দিয়ে সরকারের লাভটা কোথায়! লকডাউন নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগও কোথায়! কিন্তু আমরা যে যার যার মত করে বলে যাচ্ছি, ভেবে যাচ্ছি, যুক্তিও দিয়ে যাচ্ছি!

সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন মাঠপর্যায়ে কার্যকর করতে গিয়ে প্রশাসনও কঠোর অবস্থানে আছে। লকডাউন মানাতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে যাচ্ছে। কেউ লকডাউন না মেনে ঘরের বাইরে এসে পড়লে, মাস্ক না পরলে তাতে রাস্তায় দায়িত্ব পালনরত প্রশাসনের ক্ষতি কি! তারা ঝুঁকি নিয়ে করছেন তো আমাদের কল্যাণের জন্য। আবার প্রয়োজনবশত কিংবা সংকটকালীন এই সময়ে সম্মূখসারির যোদ্ধাদের কেউ চলাচল করতে গিয়ে তাদের উপর অহেতুক বল আর ক্ষমতা প্রয়োগেরও দরকার কি! যার যার অবস্থান থেকে আমাদেরকে এইটা বুঝে নিতে হবে। আর এক হয়ে কাজ করে যেতে হবে।

আগে জীবন পরে অন্য সবকিছু। জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনে লকডাউন দিতে হবে, কার্যকরও করতে হবে। মানুষ যত ঘরবন্দী জীবন যাপন করবেন ততই মঙ্গল হবে সেটাও টিক আছে। কিন্তু সমস্যা হল খেটে খাওয়া মানুষেরা কি করবেন? প্রথম বার সরকারি, বেসরকারি ভাবে কিছু কিছু মানুষ কিছুটা সহযোগিতা পেয়েছিলেন। দলমত নির্বিশেষে সর্বোচ্চ দরদ নিয়ে মানুষের পাশে মানুষ দাড়িঁয়েছিলেন। তাতে অনেকের ভীষণ উপকার হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে সেই সুযোগও কমে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কি হবে? খেটে খাওয়া মানুষদের কি হবে?

এই চরম দুঃসময়ে আমাদের জন্য একটাই পথ – মানুষের পাশে মানুষকেই দাঁড়াতে হবে। আর্থিক, কায়িক, মানসিক যার যেটুকু সামর্থ্য আছে, সদিচ্ছা আছে সেটুকু দিয়েই এই দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হবে সম্মিলীতভাবে। একে অন্যের কাছ থেকে দূরে থেকেও পাশে থাকতে হবে আমাদেরকে। প্রতিটি সমাজের, এলাকার যুব সমাজকে আবারো জেগে উঠতে হবে। সামর্থ্যবান সব শ্রেণী পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

অন্তত লোক দেখানোর জন্য হলেও মানুষের পাশে দাঁড়ান, প্লীজ। যত ইচ্ছা ফটোসেশন করুন তাতে আপনার অধিকার আছে কারণ আপনি করছেন তাই। আপনাদের কাজ অন্যরাও দেখুক তারাও অনুপ্রাণিত হউক। আমরা কিছুই করতে না পারি অন্তত আপনাদের ভাল এই কাজগুলো প্রচার তো করতে পারবো। দেখে খুশি তো হতে পারবো। যে যাই বলুক আপনারা দয়া করে আবার উজ্জীবিত হউন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিন, প্লীজ।


লেখক: সভাপতি, কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ। সহকারী পরিচালক, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার।