আরটিভি: রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ৩টি বিয়ের কথা স্বীকার করেছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক।

পুলিশ বলছে, এই ৩টি বিয়ের মধ্যে মাত্র ১টি বিয়ের কাবিন করেছেন তিনি। বাকি ২টির কাবিন করেননি।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) রিমান্ডের প্রথম দিনেই তিনি এ কথা বলেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ।

ডিসি বলেন, ‘কাগজপত্র ও কাবিন না থাকা সত্ত্বেও বিয়ে কিভাবে বৈধ হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি (মামুনুল হক) বিভিন্ন কুযুক্তি ও অপব্যাখা দেন। জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতেই মামুনুলের কাছে তার কথিত বিয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। বিয়ের ব্যাপারে তিনি নিজের মতো ব্যাখা দেন। তবে, তিনি এটা স্বীকার করেছেন যে, তার শেষ দুই বিয়ের কোনো আইনি ডকুমেন্ট তার কাছে নেই।’

তদন্ত সংশ্নিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ‘জান্নাতুল ফেরদৌস লিপি মামুনুলের কথিত ছোট স্ত্রী। জান্নাত আরা ঝর্ণাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করছেন তিনি। মামুনুলের প্রথম স্ত্রীর নাম আমেনা তৈয়্যেবা। কথিত মেঝো ও ছোট স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের কোনো কাবিননামা হয়নি বলে সাফ সাফ মামুনুল হক পুলিশকে জানান।’

মামুনুল হক পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, ‘যে দু’টি বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তাদের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছেন। তবে বিয়ে সংক্রান্ত কোনো বৈধ কাগজপত্র তার কাছে নেই। কাবিনামাও নেই। ওই দুই নারীর ডিভোর্স হওয়ায় তাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই এগিয়ে যান তিনি। একজনকেস তার নিজস্ব একটি মাদরাসায় চাকরিও দিয়েছেন তিনি।’

গত রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। মারধর, হুমকি ও ধর্মীয় কাজে ইচ্ছাকৃত গোলযোগ সৃষ্টি, চুরির অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় ২০২০ সালের ৭ মার্চ দায়ের করা মামলায় তাকে আজ সোমবার (১৯ এপ্রিল) ৭ দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ।

মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাজেদুল হক মামুনুল হককে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের বিচারক দেবদাস চন্দ্র অধিকারী রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।

এদিকে মাওলানা মামুনুল হকসহ হেফাজতে ইসলামের অন্যান্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৩টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। যে মামলাগুলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হয়েছে।

আজ সোমবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিআইডি প্রধান, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, ২০১৬ সালের ৫টি মামলা ও সাম্প্রতিক সময়ের ১৮টি মামলাসহ মোট ২৩টি মামলার তদন্ত করবে সিআইডি। আমরা আশা করছি খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তদন্ত শেষ করব এবং যারা এখনও আইনের আওতায় আসেনি তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করব।

তিনি আরও বলেন, হামলা, ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনায় যারা উপস্থিত ছিল, মদত দিয়েছে, উসকানি দিয়েছে, জ্বালাও-পোড়াও করেছে তাদের ফুটেজ ফরেনসিক করা হবে। ফরেনসিক করে যাদের পাওয়া যাবে তাদের সবাইকেই আমরা আইনের আওতায় আনব।

ইতোমধ্যে যেসব হেফাজত নেতা পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিআইডি।