সিবিএন ডেস্ক:
চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারির পর মিয়ানমারে ক্ষমতার পালাবদলের পর পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হচ্ছে। প্রথম অবস্থায় দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ মনে হলেও ধীরে ধীরে সেটি আরও সংগঠিত হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাবে দুই শতাধিক এবং বেসরকারি হিসাবে সাত শতাধিক ব্যক্তি নিহত, অসংখ্য আহত বা আটক হয়েছেন। জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশের পাশাপাশি আহ্বান জানাচ্ছে যে, মিয়ানমারে যেন সিরিয়ার পরিণতি না হয়। দেশটির এই অস্থিতিশীল পরিবেশ বাংলাদেশের জন্য দ্বৈত বিপদের সংকেত দিচ্ছে। একদিকে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি যেমন অনিশ্চিত হচ্ছে, অপরদিকে দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে জটিলতা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশ নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে।

এ বিষয়ে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, ‘পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছে। বৈশ্বিক শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক অবস্থান ও ভূ-রাজনীতির কারণে মিয়ানমার পরিস্থিতি সহসা ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছে না।’

গোটা বিষয়টিকে দ্বিমুখী সংকট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একদিকে নিরাপত্তা হুমকি, অপরদিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ঝুলে যাওয়া— উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি উদ্বেগের।’

মিয়ানমারে রাজনীতির পালাবদল এখন সে দেশের জনগণের হাতে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে বিদেশি শক্তি ও টাকার প্রভাব রয়েছে। এর ফলে বিষয়টি অনেকটা প্রক্সি গেমের মতো হয়ে পড়েছে।’

সাবেক জেনারেল শহীদুল বলেন, ‘বাংলাদেশের উচিত হবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রাখা। এখনই হয়তো কোনও প্রত্যাবাসন হবে না, কিন্তু আলোচনা অব্যাহত থাকলে পরবর্তীতে দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘গোটা মিয়ানমারের পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে হলেও রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন কোনও প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ হচ্ছে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এ বিষয়ে আমরা সজাগ আছি।’

মিয়ানমার পরিস্থিতির প্রতি বাংলাদেশ নজর রাখছে জানিয়ে তিনি বলেন,‘যেকোনও জায়গায় যেকোনও মুহূর্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা আলোচনার জন্য তৈরি।’

এদিকে প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের সর্বশেষ সংখ্যায় মিয়ানমারকে আফগানিস্থানের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পত্রিকাটি বলেছে, মিয়ানমার একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হতে চলেছে। অপরদিকে মিয়ানমারের নির্বাচনে যেসব সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিন্তু শপথ নিতে পারেননি, তারা বিদেশে একটি অস্থায়ী সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।’ -বাংলা ট্রিবিউন