ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন

মহামারী, লকডাউন রোজা এ সবকিছুকে মাথায় রেখে আমাদের সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা নির্বাচন করতে হবে।
করোনা প্রতিরোধে প্রথম শর্ত হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখা। শরীরকে স্ট্রেস ফ্রি রাখা। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই এ সময়ে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ভিটামিন এ, ই, সি, বিটা-ক্যারোটিন, জিংক, মেলেনিয়াম এগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন ও মিনারেল। এবারের রোজায় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলাও আবশ্যক যাতে সুস্থতার সাথে রোজা পালন করা যায়। জ্যৈষ্ঠের এই সময়ে প্রায় ১৫ ঘন্টা সময় রোজা রাখার পর ইফতার করতে হবে।
তাই খাদ্য গ্রহণে লক্ষণীয় বিষয়সমূহ
-♦ পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পান করে দেহের পানি স্বল্পতা দূর করা; কেননা ডিহাইড্রেশন দেহের ইমিউনিটিকে দুর্র্বল করে দেয়। চোখ, নাক, মুখ, ফুসফুসের মিউকাস কমে যায়। ফলে জীবানু আক্রমণ দ্রæত হয়। মিউকাস দেহকে জীবাণু সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।
-♦ চাহিদা অনুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।
– ♦অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ। ভিটামিন ও মিনারেল যেমন – ভিটামিন-এ, সি, ই, বিটা ক্যারোটিন, জিংক ও মেলেনিয়াম ইত্যাদি।
– ♦কড়াভাজা ও ভুনা খাবার পরিহার করা। কারণ, এগুলো শরীরে ফ্রি রেডিকেল তৈরী করে।
-♦ প্রতিদিন ১টি ডিম খাদ্যতালিকায় রাখুন। কারণ ডিমের কুসুমে ভিটামিন এ, ডি, জিংক কোলিন, মেলেনিয়াম সমৃদ্ধ এবং ডিমের প্রোটিন উচ্চ জৈবমূল্য সমৃদ্ধ।
– ♦তাজা রঙিন শাকসবজি ও ফল প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা। এরা ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হজমে সাহায্য করে।
– ♦একজন ব্যক্তির বয়স, ওজন, উচ্চতা কাজের ধরন এবং বাজারে খাদ্যের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিনের খাদ্য নির্বাচন করতে হবে। সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে তাই এ বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে সারা বছরের খাদ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
– ♦দীর্ঘসময় পেট খালি থাকার কারণে বিপাক ক্রিয়ার গতি কমে যায়। সেই সাথে হুট করে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণে লিভার ও কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। তাই ইফতারি হতে হবে হালকা কিন্তু উচ্চ জৈবমূল্য সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: ছোলা-খেজুর, ডিম, ফল। ইফতার শেষ করে মাগরিবের নামায এর পর খাদ্যতালিকায় নির্ধারিত সকালের খাবারটি রাখা যেতে পারে। এরপর তারাবি নামাযের শেষে বা পূর্বে রাতের খাবার খাবে। নির্ধারিত দুপুরের খাবারটি খেতে হবে সেহরীতে। খাওয়া শেষে ১ কাপ দুধ খেতে হবে। যাদের দুধে সমস্যা তারা ১ কাপ দুধের তৈরী টকদই খেতে পারেন। সেহরিতে খুব আগে খাওয়া শেষ না করাই ভালো। সেহরিতে এমনভাবে খেতে হবে যেন সময় শেষ হবার ঠিক পূর্বমুহূর্তে খাদ্য গ্রহণ শেষ হয়। এ বিষয়টি বিশেষভাবে ডায়াবেটিক রোগীদের।
– ♦খাদ্যতালিকা হতে কার্বহাইড্রেট কোনভাবেই বাদ দেয়া যাবে না।
ফল হলো বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল, আঁশ এবং নানা রকম প্রাকৃতিক ফটোকেমিক্যাল এর উৎস। যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উৎপন্ন করে শরীরকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব। বলা হয়ে থাকে, জ্যৈষ্ঠ মাস হলো মধুমাস। তাই এ সময়ের পাকা আম, পেঁপে, কাঁঠাল, তরমুজ, বাঙি এসব ফল থেকে প্রাপ্ত বিটা-ক্যারোটিন ও লাইকোপিন শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। পেয়ারা, আমড়া, করমচা, অরবরই, পায়লা, আমলকী, কমলালেবু, জাম্বুরা ইত্যাদি টকজাতীয় ফল ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। এবং শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উৎপন্ন করে। নানারকম সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে।
সুতরাং আসুন আমরা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণ করি এবং নিজে ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রেখে সুস্থ জাতি গঠন করি ।

নার্স ও পুষ্টিবীদ, কক্সবাজার। syedahmedtanshiruddin@gmail.com