মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম):
আধুনিক বিজ্ঞানের বদৌলতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কৃষি খাতকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় সরকার দেশের কৃষি খাতকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও কৃষকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুফল পেতে শুরু করেছে বাঁশখালীর উপকূলীয় জনপদের ৪ লক্ষাধিক মানুষ। বিশ্বের বিশাল জনগোষ্ঠী অধ্যূষিত চীন কৃষি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেয়ার কারণে সুফল পাচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশও কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পথে রয়েছে। আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাঁশখালী উপকূলে কৃষি খাতে একের পর এক সফলতা অর্জিত হচ্ছে ।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর কৃষকদের প্রযুক্তিগত এবং কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে আসছে । তাছাড়া কৃষি কাজ জোরদারের লক্ষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী কার্যক্রম, কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ , ভ্রমনের লক্ষে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ, বাতায়ন, কৃষি প্রযুক্তি ভান্ডার, কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা, কৃষকের জানালা, এ্যাপসের মাধ্যমে কৃষকদের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির আওতায় আনা হয়েছে । এতে কৃষক-কিষাণীরা দলীয় ও সমষ্টিগত সেবার পাশাপাশি ঘরে বসে কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ করে ফসলের বাড়তি উৎপাদনের প্রতি মনোযোগী ও উপকৃত হচ্ছে।

বাঁশখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত এলাকায় লবণাক্ত ও খরা সহিষ্ণু ধান আবাদের ফলে পতিত জমিগুলো ক্রমান্বয়ে আবাদের আওতায় চলে আসছে । ফলে প্রতি বছর এ উপজেলায় ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

বাঁশখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীতে চলতি বোরো মৌসুমে হাইব্রিড ধানের চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর এবং উফশী ধানের চাষ হয়েছে ৭ হাজার ৩০০ হেক্টর। ৩৭৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাঁশখালী উপজেলায় সর্বমোট ১০ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
এবছর পুরো উপজেলায় ৫৮ হাজার মেট্রিক টন বোরোর ফলন হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশখালীর গন্ডামারা, ছনুয়া, সরল, পুঁইছড়ি, শেখেরখীল,বাহারছড়া, খানখানাবাদ ইউনিয়নে বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোর মধ্যে গন্ডামারা পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকায় তরমুজের চাষ হয়েছে প্রচুর। তাছাড়া বাঁশখালীর পূর্ব দিকের ইউনিয়নগুলোর বেশিরভাগ জমিতে সবজি উৎপাদন হলেও কিছু কিছু জমিতে বোরো ধানের চাষ লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া বৈলছড়ি, পুকুরিয়া ও সাধনপুর ইউনিয়নের কিছু জায়গায় বার্লি, সূর্যমুখী, গ্লাডিওলাস, গম চাষ হচ্ছে। পুকুরিয়া ইউনিয়নের সাঙ্গু নদীর চরে তরমুজ ও বাঙ্গি চাষ হয়েছে চলতি মওসুমে।

বাঁঁশখালীতে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। চাষের শুরুতে বিদ্যুৎ সংকট, প্রচন্ড খরার কবলে পড়লেও পরবর্তীতে অনুকূল আবহাওয়ায় বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে এখন বোরো ধানের হিল্লোল। এদিকে কৃষির উপকরণসহ সকল দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি কৃষকরা চাচ্ছেন উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক পড়েছে। বোরো ক্ষেতে সেচের সমস্যা না হওয়ায় ও বর্তমান বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা অনেক খুশি।

ছনুয়া ইউনিয়নের মধুখালী ব্লকের প্রান্তিক কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার ২ কানি জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে যেকোনো সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ পাচ্ছি।’

মোঃ শহীদ উল্লাহ (৪০)। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে ছনুয়া ব্লকে কর্মরত আছেন তিনি। সাতসকালে ছুটে চলেন কৃষকের ধারে ধারে। ছনুয়ার মত প্রান্তিক জনপদের কৃষকদের নানা পরামর্শ সহযোগিতা দিয়ে তিনি কৃষি বিপ্লব ঘটাচ্ছেন উপকূলে। বাঁশখালীর ওই ইউনিয়নে আজ থেকে ৫ বছর আগেও একরের পর একর জমি অনাবাদী পড়ে থাকতো। এখন চুল পরিমাণ কৃষি জমি অনাবাদী নেই। এরই নেপথ্যে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহীদ উল্লাহ।

বর্ষা মৌসুমে লবণের মাঠে ধান চাষ, শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ছনুয়া ইউনিয়নে।

এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহীদ উল্লাহ কক্সবাজার নিউজকে বলেন, ‘সরকারের বিশেষ একটি উদ্যোগ দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না থাকে ;সে লক্ষ্যে প্রত্যেকের বসতভিটায় কিছু শাক-সবজি এবং ফলমূলের গাছ রোপনের জন্য পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া বোরো ধানের আবাদ কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।’