চৌধুরী আকবর হোসেন, বাংলা ট্রিবিউন:
রফিকুল ইসলাম, তিনি ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রাখেন। ওয়াজে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়াসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইসলামিক বক্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রফিকুল ইসলাম বরাবরই আলোচিত হওয়ার চেষ্টা করেন। এজন্য ওয়াজ মাহফিলে প্রাসঙ্গিক নয় এমন বক্তব্য দেন। তার মধ্যে ভাইরাল হওয়ার এক ধরণের প্রবণতা আছে।
রফিকুল ইসলাম দাওরায়ে হাদিস পড়েছেন রাজধানীর জামিয়া মাদানীয়া বারিধারা মাদ্রাসায়। একইসঙ্গে তিনি বিএনপি জামায়াত জোটের শরিকদল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অঙ্গ সংগঠন যুব জমিয়তের নেত্রকোনা জেলার সহ-সভাপতি। ‘শিশু বক্তা’ হিসাবে পরিচিত হলেও আসলেই তিনি শিশু নন।
জানা গেছে, মাদ্রাসার ছাত্র থাকাকালীন বিভিন্ন মাহফিলে ওয়াজ করতেন রফিকুল। শিশু বক্তা হিসেবে খ্যাত রফিকুল ইসলাম বরাবরই ওয়াজে অপ্রাসঙ্গিক, বিতর্কিত বক্তব্য রেখে সমালোচিত হয়েছেন। অন্যদিকে ‘মাদানী’ উপাধি ব্যবহার করায় রফিকুল ইসলামকে আইনি নোটিশ পাঠান হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মদিনা শাখার আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী। সাধারণত সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা পড়াশোনা করেন তারা নামের সঙ্গে ‘মাদানী’ যুক্ত করেন।
জানা গেছে, শারীরিক আকৃতিতে ছোট হওয়ায় তাকে এখনও ‘শিশু বক্তা’ বলা হয়। আবার অনেক জায়গায় ওয়াজ মাহফিলে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে তার নামের সঙ্গে ‘শিশু বক্তা’ যুক্ত করা হয়। নেত্রকোনায় পশ্চিম বিলাশপুর সাওতুল হেরা মাদ্রাসার পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন রফিকুল ইসলাম।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর শাপলা চত্বরে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল থেকে ‘শিশু বক্তা’ হিসেবে আলোচিত রফিকুল ইসলামকে আটক করে মতিঝিল থানা পুলিশ। যদিও কয়েক ঘণ্টা পরেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুরে পল্টনে মুক্তাঙ্গনে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ করে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ। সেখানে যোগ দেয় রফিকুল।
বিতর্কিত বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কারণে অন্যান্য বক্তারাও রফিকুল ইসলামের প্রতি অসন্তুষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইসলামিক বক্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রফিকুল ইসলাম বরাবরই আলোচিত হওয়ার চেষ্টা করেছেন। এজন্য ওয়াজ মাহফিলে প্রাসঙ্গিক নয় এমন বক্তব্য দেন। তার মধ্যে ভাইরাল হওয়ার এক ধরণের প্রবণতা আছে। আজ (বৃহস্পতিবার) জোহরের নামাজের পর সমমনা ইসলামী দলগুলোর আয়োজনে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ ছিল বায়তুল মোকাররমে। সেখানে জমিয়তও অংশগ্রহণ করেছে। রফিকুল জমিয়তের কর্মী হলেও দলের কর্মসূচিতে যাননি। তিনি ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের প্রোগ্রামে গিয়েছেন। কারণ তিনি জানেন এখানে গেলে ভাইরাল হওয়া যাবে।
ওয়াজের বক্তাদের সংগঠন রাবেতাতুল ওয়ায়েজিন বাংলাদেশের কেন্দ্রিয় নেতারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।ওয়াজের বক্তা হলেও বিতর্কিত হওয়া তাকে রাবেতাতুল ওয়ায়েজিন বাংলাদেশের সদস্য করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও রফিকুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাবেতাতুল ওয়ায়েজিন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা হাসান জামিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রফিকুল ইসলাম শিশু বয়স থেকেই বিভিন্ন মাহফিলে ওয়াজ করেছেন। সে কারণে সে শিশু বক্তা হিসেবে পরিচিত। তবে এখন তো আর সে শিশু নেই। তারপরও মানুষজন তাকে শিশু বক্তা বলে।
তবে নিজের নামের সঙ্গে শিশু বক্তা ব্যবহারে আপত্তি জানিয়েছে রফিকুল ইসলাম নিজেই। বিভিন্ন সময়ে ওয়াজে তার নামের সঙ্গে শিশু বক্তা ব্যবহার না করার অনুরোধও করেন তিনি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।