সিবিএন ডেস্ক:
পাকিস্তান সৃষ্টিতে তৎকালীন ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ছিল বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। শুধু তাই নয়, ১৯৪৪ সালে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের পক্ষে সংগ্রামী ভূমিকা রেখেছিলেন।

সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এই স্বাধীনতা কেবল ১৯৭১ সালেই যে যুদ্ধটা হয়েছে, তা নয়। ১৯৪৮ সালে যখন রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে, তখন ৫৬ ভাগ পাকিস্তানির মাতৃভাষা ছিল বাংলা; সেই বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হয়েছিল। তখন ছাত্রনেতা শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে, যে পাকিস্তান সৃষ্টিতে ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের পক্ষে সেদিন সংগ্রামী ভূমিকা রেখেছিলেন ১৯৪৪ সালে। সেই পাকিস্তানে ইংরেজি শাসক-শোষকের পরিবর্তে পাঞ্জাবি শাসক-শোষক আমরা পেয়েছি। বাঙালির কোনো মুক্তি হবে না। তাই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এই স্বাধীনতার যুদ্ধ বা সংগ্রাম শুরু করেন। এবং ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং জেলে আটক থাকেন।’

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম আর লড়াইয়ের মাধ্যমে ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে ৬৬ সালের ছয় দফা, ৬৮-এর শেষভাগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির কাষ্টে ঝোলানোর যে ব্যবস্থা করেছিল তার বিরুদ্ধে দেশের ছাত্রসমাজ ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে আনেন। এবং ৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকে ভোট দিয়ে এককভাবে তাঁর দল আওয়ামী লীগকে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে নির্বাচিত করার পরও পাকিস্তানিরা তিন মাস পর্যন্ত টালবাহানা করে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নাই। কারণ, তাদের উদ্দেশ্য ছিল; বাঙালির কাছে তারা ক্ষমতা দেবে না।’

মন্ত্রী বলেন, “একাত্তরের ১ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় সংসদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেওয়ার পর বাংলার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের যে ভাষণ, যেখানে তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘আমি যদি আর হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করো। তাদের আমরা ভাতে মারব, পানিতে মারব, জীবনের তরে রাস্তাঘাট সব বন্ধ করে দেব। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ।’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন গ্রামে-গ্রামে, ইউনিয়নে-ইউনিয়নে থানায়-থানায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো। বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশের মাধ্যমে সেদিনই গেরিলা যুদ্ধের সূচনা হয়ে যায়। এবং তিনি যখন ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, এই ঘোষণার পর মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা ঝাপিয়ে পড়ি জীবনকে বাজি রেখে।”

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এটা (মার্চ) স্বাধীনতার মাস। মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ডাক দেন। এবং আমরা জীবন বাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণে বাধ্য করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছি। আজকে আমার পরম সৌভাগ্য, আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেই ৫০ বছর পূর্তি দেখছি। শুধু তাই নয়, যাঁর জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতো না, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও অপরদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, এ দুটির সমন্বয় নিজ জীবনে দেখে সেটা পালন করার জন্য যে সুযোগ পেয়েছি, বিশেষ করে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে, এটা আমার জন্য কত বড় আনন্দের, গৌরবের এবং মর্যাদার, তা ঠিক আমি বুঝাতে পারব না।

মাঝখানে জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলের ৩০ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে দেশ পরিচালিত হয়েছিল। যার ফলে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে পড়েছিল। আবার বঙ্গবন্ধু রক্তের ও আদর্শের উত্তরাধিকার দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত ১২ বছরে তিনি বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তিনি দেশকে গড়ে তুলছেন, সেই সময়ে এই দিবস দুটি একত্রে পালন করা, আমি মনে করি জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনেকদূর আমরা পূরণ করতে পেরেছি। বলতে পারেন, আমরা প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্নের সোনার বাংলা, সেটা কোনোমতেই পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয় নাই। তবে বাস্তবায়নের পথে অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু পূর্ণতা আসে নাই। আমরা আশা করছি, এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে—তাহলে এ দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পরিণত করা সহজতর হবে। আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আর যদি সর্বোচ্চ আট বছর থাকতে পারে, তাহলে এটা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’