ফরিদুল মোস্তফা খান :
কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভস্মীভূত প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পরিবারের আনুমানিক ৭০ হাজার মানুষ এখনো খোলা আকাশের নিচে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

মঙ্গলবার সকালে দেখা গেছে, টেকনাফ-কক্সবাজার মহা সড়ক ও আশপাশের খোলা আকাশের নিচে তারা জড়ো হয়ে বিলাপ ধরে কাঁদছেন। ঘর নেই, বাড়ি নেই, নেই মাথা গুজার ঠাঁই তাদের। দুগ্ধপোষ্য শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা রয়েছেন সবচেয়ে দুরাবস্থায়।

ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সর্বস্ব হারিয়ে তারা আবারও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৭। গুরুতর আহত রয়েছেন অনেকেই। এই অবস্থায় বালুখালীর আগুনে পুড়া পরিবার গুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব।
প্রকট আকার ধারন করছে বিশুদ্ধ পানি সংকট।
সব মিলিয়ে এক প্রকার মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পরিবারে।
স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কাজ করছেন ক্ষতিগ্রস্থদের।
তবুও হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে ক্যাম্প এলাকায়।

জানাগেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে পুড়ে ৭ জন মারা গেছে। তাদের মধ্যে ১ জন নারী, ২ জন শিশু ও ৪ জন বৃদ্ধ রয়েছে।

গত সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ৮-ডব্লিউ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এতে প্রায় ১২ হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একই সঙ্গে কয়েক শ দোকান, মসজিদ,মাদ্রাসা ও ভস্মীভূত হয়েছে। আগুনে বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছে। অনেক শিশু ও বয়োবৃদ্ধ নিখোঁজ থাকারও খবর পাওয়া যাচ্ছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাজার হাজার বাসিন্দা আশ্রয় হারিয়ে এক কাপড়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়হারা মানুষ তাদের ক্যাম্পের ঝুপড়ির সব মালপত্র হারিয়েছে। সন্তান-সন্ততিসহ স্বজনের খোঁজ না পেয়ে রোহিঙ্গা অনেক নারী-শিশুর আর্তনাদ চলছে মহাসড়কে।

সোমবার দুপুর তিনটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়। আগুনে ক্যাম্পের ৮, ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ব্লক সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। বালুখালী ক্যাম্পের বেশ কিছু এনজিও অফিস এবং এপিবিএনের একটি ব্যারাকও ভস্মীভূত হয়েছে।

স্থানীয় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বালুখালী বাজারসংলগ্ন মার্কেট এলাকা। এখানে কয়েক শ দোকান পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পরিচালিত দোকানগুলোর একেকটিতে কোটি টাকার বেশি মূল্যের পণ্যসামগ্রী ছিল।

এই বাজারসংলগ্ন স্থানীয়দের দু-তিন শ বাড়িঘরও পুড়ে গেছে। ক্যাম্পে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ৭ জন পুড়ে মারা গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আগুনের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থলে যান।

অগ্নিকাণ্ডের শুরুতে স্থানীয় লোকজন ও ক্যাম্পের বাসিন্দা রোহিঙ্গারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আগুনের ব্যাপ্তি ক্রমাগত বাড়তে থাক
খবর পেয়ে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে আসে। কক্সবাজার জেলা শহর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ ফায়ার সার্ভিসের সাতটি টিম আগুন নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নামে। রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে পুরো আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ তানজীম জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা জানান, আগুনে ক্যাম্পের বসতি ও রোহিঙ্গাদের জানমালের কতটা ক্ষতি হয়েছে তা জানা যায়নি।