ছোটন কান্তি নাথ :

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়া কক্সবাজারের চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলছাদক গ্রামের জন্মগত বাক প্রতিবন্ধী আলী তানভীর আশীর্বাদ হয়ে উঠেছেন প্রতিবন্ধীদের জন্য। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পুরো সময়টাই শ্রম দিয়েছেন প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে। গত দশমাসে এই তানভীর চকরিয়া ও পেকুয়ার ১৫০ জন প্রতিবন্ধীকে সহায়তা দিয়েছেন নানাভাবে।

বিশেষ করে খাদ্য সহায়তা দেওয়া ছাড়াও ৬৮ জন প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ার, দুর্ঘটনায় পা হারানো দুইজন প্রতিবন্ধীকে ট্রাই সাইকেল, ছয়জনকে ওয়াকার, চারজনকে সার্জিক্যাল জুতো, বিধবাকে সেলাই মেশিন এবং ২৩ জন প্রতিবন্ধী শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে সার্জিক্যাল হুইলচেয়ার এবং স্ট্যান্ডিং টেবল প্রদান করেছেন যুবক আলী তানভীর। তিনি এখন প্রতিবন্ধীদের বন্ধু হিসেবে সবার মাঝে ঠাঁই করে নিয়েছেন।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ৮ জন প্রতিবন্ধী শিশুর মধ্যে ৬ জনকে সার্জিক্যাল হুইল চেয়ার, একজনকে সার্জিক্যাল জুতো, তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া তামান্না নামের শিক্ষার্থীকে কৃত্রিম পা প্রদান করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসএসআরপিভির প্রকল্প কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দিদারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাশেদ রনি, মুজিবুল হক ও ফয়েজ উল্লাহ প্রমূখ।

প্রতিবন্ধীদের বন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আলী তানভীর বলেন, জন্মের পর থেকে আমি বাক প্রতিবন্ধী ছিলাম। মুখগহ্বরে জন্মগত ত্রুটি থাকায় কথা বলতে পারতাম না। পরবর্তীতে চিকিৎসার পর কথা বলতে পারলেও মা-বাবা আমাকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকতেন। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমাকে নিয়ে তাদের ভোগান্তির কথাগুলো শুনেছি। তখন প্রতিজ্ঞা করি সময়-সুযোগ হলে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করবো।

প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মানো আলী তানভীর আরো বলেন, গতবছরের মার্চে করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে তখন থেকেই শুরু প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে নেমে পড়ি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে পোষ্ট দিলে অনেকেই সাড়া দেন। সেই থেকে অদ্যাবদি চকরিয়া ও পেকুয়ার অন্তত ১৫০ জন প্রতিবন্ধী শিশু, নারী ও পুরুষকে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছি। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিবন্ধী দুই নারী-পুরুষকে বিয়েরও ব্যবস্থা করেছি। তারা এখন সুখেই সংসার করছে। আগামীতেও আমার এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

প্রতিবন্ধীদের মাঝে বিভিন্ন সামগ্রী হস্তাস্তর করার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন আলী তানভীর। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিবন্ধী শিশুদের খুঁজে খুঁজে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। তাঁর এই মানবিকতা সবাইকে অবাক করার মতোই। আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে তানভীরের উদ্যোগে বাক প্রতিবন্ধী দুই নারী-পুরুষের বিয়ের ব্যবস্থা করার ঘটনাটি।

ইউএনও বলেন, চকরিয়ার সকল প্রতিবন্ধীদের মান উন্নয়নের জন্য শীঘ্রই একটা ট্রেনিং সেন্টার চালু করা হবে। যেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে প্রত্যেক প্রতিবন্ধী নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।