শ্যামল রুদ্র,সিবিএন :

আন্ত:দেশীয় যোগাযোগ বাড়িয়ে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বানিজ্য সম্প্রসারণ করতে খাগড়াছড়ির রামগড় মহামুনি এলাকায় বহুপ্রতিক্ষিত রামগড়-সাবরুম স্থল বন্দর স্থাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর শুভ উদ্ভোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে ভিডিও কন্ফারেন্সের মাধ্যমে মঙ্গলবার ৯, মার্চ বেলা ১২টার পর উদ্বোধন ঘোষনা করেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত কয়েক মাস রাত-দিন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা শ্রম দিয়ে গত ১৩, জানুয়ারী সেতুর কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করেন। এখন পূর্নাঙ্গ স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন দু-দেশের জনগন।

খাগড়াছড়ির রামগড়ে নির্মীয়মাণ স্থলবন্দর বাংলাদেশ-ভারত আন্ত:দেশীয় যোগাযোগ বাড়াবে। সম্প্রসারিত হবে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বানিজ্য। এটি হবে দেশের ২৩তম পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দর। এখানকার সার্বিক কার্যক্রমে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীর প্রত্যাশা করছেন এ অঞ্চলের মানুষ। সমাজের উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও খেঁটে খাওয়া সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা রামগড় স্থল বন্দর এই অঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সর্বত্র কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে, বৈদেশিক বানিজ্যে তথা পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবাহ,বিনিয়োগে আন্তর্জাতিক করণ, বাজার সম্প্রসারণ ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে এগিয়ে যাবে দেশ, সফল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে যুক্ত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়।

বানিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ আয়োজিত বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড এক্সপোর্ট ফেয়ার(বিআইটিএফ) উদ্বোধন কালে গত বছরের ২৭,অক্টোবর রোববার এ প্রসঙ্গে বলেন “চট্রগ্রাম বন্দরকে পূর্ব ভারতের কমপক্ষে পাঁচ কোটি মানুষ ব্যবহার করলে প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বানিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে। উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য কলকাতা বন্দরে যেতে ১২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় অন্যদিকে চট্রগ্রাম বন্দরের দুরুত্ব অনেক কম।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গত বছর ১০,সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ‘নেইবারহুড ফাষ্ট’ ও ‘অ্যাক্ট ইষ্ট পলিসি’র প্রভার বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বীজ নিহিত আছে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সহযোগিতার ওপরই। ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসাবে পরিচিত এই অঞ্চলের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুদর্শন দত্ত ও অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী মনে করেন, অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে রামগড়-সাবরুম স্থল বন্দর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে অবশ্যই তা একটি ইতিবাচক খবর। একটা সময় ধরেই নেওয়া হয়েছিল এটা বোধহয় আর হচ্ছে না। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আগ্রহ এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতায় সফলতার দিকে এগুচ্ছে রামগড় -সাবরুম স্থল বন্দরের অগ্রযাত্রা। পার্বত্য চট্রগ্রামে প্রথম স্থাপিত এই বন্দরের বিশাল কর্মযজ্ঞ এ সব দরিদ্র মানুষের মুক্তির নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে বলে তাঁরা মনে করেন। এ বন্দর দুদেশের মানুষের জন্যই হবে আর্শীবাদ স্বরুপ। এই বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশ কিংবা একই দেশের সব অঞ্চল কোন বিশেষ পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ না-ও হতে পারে। প্রাকৃতিক ও বৈষয়িক সুবিধা, উৎপাদনে বিশেষজ্ঞতা ও শ্রম বিভাগের কারণে উৎপাদিত পণ্য পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে আদানÑপ্রদানের বিষয়টি স্বাভাবিক নিয়মেই হয়।

রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী ও রামগড় বাজারের ব্যবসায়ী তাপস বিশ্বাসের ভাষ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই সচেষ্ট ছিল। এটা সম্ভব হওয়ায় ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো ত্রিপুরা, মেঘালয়,আসাম,মনিপুর মিজোরাম,নাগাল্যান্ড এবং অরুনাচল ( সেভেন সিস্টার্স) চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসা-বানিজ্যে গতি আনতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন দুদেশেরই ব্যবসায়ীরা। খাগড়াছড়িসহ চট্রগ্রামের ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই রামগড় স্থল বন্দরের অগ্রগতি বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন, সরেজমিন পরিদর্শনও করেছেন অনেকে। রামগড় স্থল বন্দর চালু হলে ব্যবসা-বানিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে, পুরো এলাকার চেহারাটাই পাল্টে যাবে বলে মনে করেন তাঁরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রামগড়ে স্থলবন্দর স্থাপনের ঘোষনা দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১৯৯৬ সালের ২৮ জুলাই স্থলপথ ও অভ্যন্তরীণ জলপথে ভারত ও মায়ানমার থেকে আমদানি-রপ্তানি বা খাদ্য ছাড়করণের উদ্দেশে দেশে ১৭৬টি শুল্ক ষ্টেশনের তালিকা ঘোষনা করে।

ওই তালিকায় ৪৮ নম্বর ক্রমিকে ছিল রামগড় স্থল শুল্কষ্টেশন। শুল্ক ও বর্ণিত পদ্বতি শর্তাবলী পালন করে পণ্যের গুনাগুন, পরিমাপ, মূল্য ও শুল্ক শ্রেণী বিন্যাস সম্পর্কিত প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা যাবে।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরী বলেন, রামগড়েই চালু হবে পার্বত্য চট্রগ্রামের প্রথম রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধীরগতিতে কাজ চললেও সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ উভয় পক্ষ ত্বরিত গতিতে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করায় ব্যবসায়ীসহ সকল মহল আশার আলো দেখছেন। সব মিলিয়ে রামগড় স্থল বন্দর পূর্নাঙ্গ ভাবে চালু হলে বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে যে, বিশাল ভূমিকা রাখবে নিশ্চিত ভাবেই তা বলা যায়। আর যোগাযোগের ক্ষেত্রে সূচিত হবে এক নতুন দিগন্তের। আঞ্চলিক গন্ডি ছাপিয়ে এ যেন বিশ্বব্যাপি সেতুবন্ধনের এক পূর্বাভাস।