মুহাম্মদ মনজুর আলম, চকরিয়া:
চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর উপর তরছঘাট পয়েন্টে একটি পাকাঁ সেতুর অভাবে কয়েক যুগ ধরে পাঁচ ইউনিয়নের পঞ্চাশ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের দুর্বীসহ জীবনযাপন যেন কাটছেই না। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের ।

কয়েক বছর ধরে “বাঁশের সাঁকো থেকে কাঠের সেতুতে উন্নীত। তারপরও স্বস্তি নেই। বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার আশংকায় বর্ষা আসলেই কাঠের সেতুটি খুলে ফেলা হয়। তখন নৌকায় পারাপার ছাড়া কোন উপায় থাকে না মানুষের। বর্ষার শেষে আবারও কাঠ দিয়ে সেতুটি বাঁধা হয়। এভাবে জীবন চলছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার তরছঘাটা এলাকার মানুষের। শুধু ওই এলাকার মানুষই নয়, এ কাঠের সেতুর উপর নির্ভরশীল সাহারবিল, পূর্ব বড়ভেওলা , কৈয়ারবিলের আংশিক খিলচাদক, বিএমচর ও কোনাখালী পাচঁ ইউনিয়নের লাখো মানুষ।

 

জানা গেছে, চকরিয়া পৌরসভার তরছঘাটা-পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের সংযোগস্থল মাতামুহুরী নদী। সেখানে ১১০মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি কাঠের সেতু নির্মান করা হয়েছে। সেখানে সমান্য কিছু অর্থ বরাদ্ধ দেয় কক্সবাজার জেলা পরিষদ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তরছঘাটা এলাকায় নির্মিত কাঠের সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন সাহারববিল, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, কৈয়ারবিলের আংশিক খিলচাদক ও কোনাখালী ইউনিয়নের লোকজন পারাপার হচ্ছেন । কেউবা রিক্সা-টমটম-মোটরসাইকেলে চড়ে আবার কেউবা পায়ে হেঁটে পার হচ্ছেন কাঠের সেতুটি। তবে প্রতিদিন সকলেই চরম ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দিয়ে জীবন হাতে নিয়ে পার হচ্ছেন। পারাপারের সময় ধারন ক্ষমতার স্বল্পতার কারনে ছোট-বড় দূর্ঘটনাও ঘটছে প্রদিনিয়ত অহরহ।

তরছঘাটা এলাকার কলেজ শিক্ষক মোসলে উদ্দিন মানিক বলেন, প্রতি বছর বর্ষায় যখন পাহাড়ি ঢল নামে তখন এ কাঠের সেতু নদীতে ভেসে যাওয়ার আশংকায় খুলে ফেলা হয়। তখন ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এসময় স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী ও জনসাধারণকে চরম দূর্ভোগে পড়তে হয়।

 

পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের কৃষক মৌলবী মনছুর আহমদ বলেন, তরছঘাটার পার্শ্ববর্তী অন্তত পঞ্চাশটি গ্রামে প্রতি বছর ব্যাপক আকারে রবি শস্য ও সবজি চাষ করা হয় । যাতায়াতের অসুবিধার জন্য আমাদের ক্ষেতে উৎপাদিত বিভিন্ন তরিতরকারী পাশর্^বর্তী বাজার গুলোতে নেয়া সম্ভব হয়না। এতে একদিকে যেমন উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে আমরা বার বার বঞ্চিত হচ্ছি, অন্যদিকে সময় মত ক্ষেতের ফসল বাজারে পৌছাতে না পেরে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে ।

 

পূর্ব বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আরিফ দুলাল বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মাতামুহুরী নদীর উপর তরছঘাটা এলাকায় একটি পাকা সেতু নির্মানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কাঠের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির কথা স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়েও অবগত করা হয়েছে। সেখান থেকে আশ্বাসও পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, একটি পাকা সেতু নির্মিত হলে পূর্ব বড় ভেওলাসহ ৫টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক জনসাধারণের ভাগ্য বদলাবে এবং দীর্ঘ দিনের আশা পুরণ হবে । কৃষকেরাও তাদের উৎপাদিত পণ্যে সহজে বাজারজাত করে ন্যায্য মূল্য পাবে।

 

জানতে চাইলে চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার) ১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ জাফর আলম বলেন, তরছঘাট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোকজন ঝুঁকিনিয়ে মাতামুহুরী নদী পারাপার হচ্ছে এটি সত্য । তবে আমি নির্বাচিত হবার পর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে যাচ্ছি যাতে অল্প সময়ের ভিতরে তরছঘাটায় একটি সেতু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মান করা যায় । সরকারি ভাবে অর্থ বরাদ্ধ পাবার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আমার পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে ।