আনিস নাঈমুল হক

নীল জলরাশি, সবুজ পাহাড় আর সাদা মেঘ মালার মিলনমেলা মানেই যেন নিভৃতে নিসর্গ পার্ক। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নে মাতামুহুরি নদীর তীরে পার্কটির অবস্থান।
কক্সবাজার থেকে নিভৃতে নিসর্গ পার্কের দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার এবং চকরিয়া থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার। এর দক্ষিণে পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলা।

দুইপাশে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে চলে গেছে মাতামুহুরী নদী। পাহাড় ও নদীর অপরূপ সান্নিধ্য এখানে। নদীতে নৌকা ভ্রমণে পাহাড় নদীর মিতালি দেখার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় বিভিন্ন বন্য প্রাণী, পাহাড় বেয়ে ঝরে পড়া ঝরনা, নানা পাখির কলরব মন পুলকিত করবে। নীল জলরাশি দিয়ে যেতে যেতে দেখা মিলবে একাধিক সুউচ্চ সাদা পাথরের পাহাড়ের।

সবুজ পাহাড় ঘেরা দৃষ্টিনন্দন এই জায়গাটি এত দিন পর্যটকের দৃষ্টিসীমার বাইরে ছিল। অচেনা এই পর্যটন স্পটের নামকরণ জেলা প্রশাসকের দেয়া ‘নিভৃতে নিসর্গ পার্ক’ হয়েছে মাত্র ২মাস আগে।
বিদায়ী জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন ফলক উন্মোচন করেন ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর।

তবে পার্কের আশেপাশে থাকার কোনো জায়গা নেই। রাতে থাকতে চাইলে আপনাকে চকরিয়া শহরে চলে আসতে হবে। সেখানে মোটামুটি মানের হোটেল আছে। আর আপনার পরিকল্পনা যদি থাকে কক্সবাজার যাওয়ার তাহলে চকরিয়া থেকে দেড় ঘন্টা পথ দূরত্বে কক্সবাজার চলে যেতে পারেন।

ঘুরতে আসা পর্যটক মোরশেদ আলম বলেন,বাংলাদেশে নদীর পাশে এরকম পর্যটন স্পট কখনো দেখিনি। আমি গর্বিত কক্সবাজারের মধ্যে এমন একটি সুন্দর জায়গা পেয়ে।তবে দূর থেকে পর্যটক আসলে এখানে থাকার ব্যবস্হা নেই। যদি করা হয় তাহলে সুবিধা হত।

কক্সবাজার থেকে আসা পর্যটক সুমন বলেন,এ পার্কটি দেখে আমি মুগ্ধ। কক্সবাজারের মধ্যে এত সুন্দর জায়গা আছে কল্পনা করতে পারিনি। আমার অনেক ভালো লেগেছে নদীভ্রমনটি।

সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশ রামু উপজেলা শাখার সভাপতি কামরোজ সরওয়ার বলেন, আমরা একটি টিম সহ ঘুরতে এসেছি পার্কে। ৮০০শ বা ১হাজারের মধ্যে ২টি নৌকা নিয়ে গিয়েছি।যদি শ্বেত পাহাড়ের দিকে ইঞ্জিনের নৌকায় করে যদি ঘুরে না আসতাম, হয়ত জীবনে এত সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য কখনো হতোনা।সবমিলিয়ে অসাধারণ একটি জায়গা।

সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নদীভ্রমণ সবার জন্য উন্মুক্ত এইখানে। পার্কটি নতুন হওয়ায় এখনো তেমন গুছানো পর্যটন বান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়নি। তবে পর্যটনের উন্নয়নে কাজ চলছে বেশ। প্রতিদিনই হাজারো পর্যটক ভিড় করে এই পার্কে।পর্যটকদের আকর্ষণীয় কায়াকিং ও রয়েছে ঘন্টায় ২০০টাকা ভাড়া নেয়।

ঘন্টা খানেক দূরত্বে দেখা মেলে শ্বেতপাথরের বুক চিরে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে ঝরনার রক্তক্ষরণ। স্বচ্ছ-নীল জলের নদীতে ডিঙি নৌকায় ভাসতে ভাসতে আপনার মনে হবে এ এক অন্য রকম দার্জিলিং। যেখানে একসঙ্গে নীল জলরাশি, সবুজ পাহাড় আর সাদা মেঘমালার মিলনমেলা।

কক্সবাজারের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন রূপ–লাবণ্যে ভরা এক লীলাভূমি। জায়গাটিতে একবার যাঁদের পা পড়েছে, তাঁদের অনেকের মুখে দার্জিলিংয়ের তুলনা। এখন বিপুল পর্যটক টানছে অচেনা এই দার্জিলিং।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা লীলাভূমি বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। যেখানে মেঘালয়ের মতো পাহাড়–পর্বত, সবুজে ঘেরা পাহাড়ের বুকে একাধিক ঝরনাধারা, হিমাচলের শুভ্র মেঘের গালিচা মুহূর্তেই শরীর–মন সতেজ করে দেয়।

ঢাকা বা অন্য যে জায়গা থেকেই আসেন কক্সবাজারগামী গাড়িতে করে গিয়ে চকরিয়া বাস স্ট্যান্ডে নেমে যেতে হবে। চকরিয়া সিটি সেন্টারের সামনে থেকে সিএনজি বা জীপ রিসার্ভ করে সরাসরি এই পার্কে যেতে পারবেন। এই পদ্ধতিই সবচেয়ে সহজ উপায়। সিএনজি রিসার্ভ ভাড়া ২০০ টাকা। এছাড়া লোকাল ওয়েতে মানিকপুর হয়ে ৪০টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায় এই পার্কে।