শাহেদ মিজান, সিবিএন:

মৃত্যু অবধারিত। তবুও কিছু মৃত্যু ছুঁয়ে যায় পৃথিবীকে; কাঁদিয়ে যায় অগণনিত মানুষকে। শোকের অতলে ভাসিয়ে দিয়ে যায় স্বজনদের। এমন একটি মৃত্যু যেন স্কুলছাত্র সায়ানের। অগণিত মানুষের দোয়া, ভালোবাসা ও সহায়তাও আটকাতে পারেনি সায়ানকে। ক্যান্সারের কাছে হেরে গেলো সবার ভালোবাসার সায়ান। স্বজন, সহপাঠীসহ কক্সবাজারের আপামর মানুষকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলো সম্ভাবনাময়ী এই কিশোর।

২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে সায়ান।

নানা কারণে বেশ আলোচিত হয়েছিলো ক্যান্সার আক্রান্ত সায়ান। কেড়েছিলো কক্সবাজারের অগণিত মানুষের ভালোবাসা। প্রতিদানও দিয়েছিলো সায়ানের ভালোবাসার মানুষগুলো। সায়ানকে বাঁচাতে সবাই যেন একট্টা হয়েছিলো। যে যেভাবে পেরেছেন বাড়িয়েছিলেন সহযোগিতার হাত।

সায়ানের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষ যে ভালোবাসা দেখিয়েছে তাতে অবিভূত এবং কৃতজ্ঞ তার পরিবার।

সায়ানের বাবা ইরফানুল হক চৌধুরীর বাল্য বন্ধু ও এসএসসি-৮৩ ব্যাচের মডারেটর ইউসুফ বদরী বলেন, সায়ানের জন্য পুরো দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন ছিলেন। সায়ানকে বাঁচাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষে যে সহায়তা করেছেন তা অবিশ্বাস্য। এই জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

প্রধানমন্ত্রী, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ দিয়েছিলো বেশ অর্থ সহায়তা। সবার একটাই চাওয়া ছিলো- আবার সবার মাঝে ফিরে আসবে সায়ান! আবার রাঙিয়ে দেবে তার আজন্মের আঙিনাগুলো।

কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামমোহন দে বলেন, ‘সায়ান এভাবে চলে যাবে আমরা কখনো ভাবিনি। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমরা প্রায় সময় তার খোঁজ রাখতাম। শেষ বার যখন আমরা তাকে দেখতে গিয়েছিলাম তখন তার মনোবল বেশ শক্ত ছিলো। সে আমাদের সাথে কথা বলেছে। বলেছে তার কোনো কষ্ট হচ্ছে না। তখন তার মধ্যে সুস্থ হয়ে বিদ্যালয়ে ফেরার আকুতি দেখেছি। আমরা আশায় ছিলাম সায়ান সুস্থ হয়ে আবার বিদ্যালয়ে ফিরবে। আগের মতো আবার বিদ্যালয়ের আঙিনা মেতে উঠবে। কিন্তু বিধি বিধান; সায়ান আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আমরা তার মৃত্যৃতে গভীর শোকাহত।’

ঢাকায় ১১ মাস ধরে চলছিলো সায়ানের ব্যয়বহুল উন্নত চিকিৎসা। সবাই আশায় ছিলো আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠবে সায়ান। কিন্তু হঠাৎ আসলো তার মৃত্যুর খবর। এতে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন তার ফেরার অপেক্ষায় থাকায় মানুষগুলো। সায়ানের মৃত্যুর পর অগণিত মানুষের ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং জানাযায় অংশ গ্রহণেই এই চিত্র ফুটে উঠে।

মানবতার জন্যই মানুষ। সায়ানের জন্য মানুষ যে ভালোবাসা দেখিয়েছে তাতে যেন মানবতার আরো একটি অন্যন্য দৃষ্টান্ত রচিত হলো। এমন দৃষ্টান্ত যেন বার বার তৈরি হয়; তাই প্রত্যাশা।

জানাযায় অংশ নিয়ে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ‘সায়ানের সর্বস্তরের মানুষ যে ভালোবাসা দেখিয়েছে এবং সহায়তা করে তা দৃষ্টা হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করেছি, সায়ানকে বাঁচাতে পারিনি। সায়ান চলে গেছে, আরো অনেক সায়ান আছে; তাদের সহায়তায়ও এভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’

ওপারে অনেক ভালো থাকুক ভালোবাসার সায়ান। তার অন্তিম শয়ন হয়ে উঠুক অপূরন্ত শান্তির- এমনই প্রার্থনা সকলের।