বিদেশ ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে ঝুঁকির মধ্যে থাকা অনথিভুক্ত অভিবাসীদের জন্য সুখবর এনেছে বাইডেন প্রশাসন। ট্রাম্প অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নিলেও নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসেই অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টিতে জোর দেন। তার নতুন অভিবাসন নীতি সংস্কারে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।

গত বৃহস্পতিকার ডেমোক্র্যাটরা বাইডেনের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আইন সংস্কার প্রক্রিয়ার খসড়া তুলে ধরেছেন। বাইডেন এ অভিবাসন নীতিমালা সংস্কারকে বলছেন ‘দীর্ঘ ছাড়’। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলের অভিবাসন নীতিমালা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোকে উল্টে দেওয়ার কথাও বলেছেন বাইডেন। ডেমোক্র্যাটদের নতুন এ প্রস্তাবিত খসড়ায় মেক্সিকো ও সেন্ট্রাল আমেরিকা থেকে আসা অনথিভুক্ত অভিবাসীদের আশার আলো দেখাচ্ছে। বহু বছর ধরে ওই অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বাসাবাড়ি, ব্যবসা এমনকি ওই দেশে তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিও হয়েছে।

সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ‘আমাদের শক্তিমত্তার একটি অখণ্ডনীয় উৎস হলো অভিবাসীরা। তারা আমাদের জাতিসত্তার পরিচায়ক। অভিবাসন নীতি সংস্কারের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোকে এক করা আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। তারা আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তারও রক্ষক হয়ে আছে বহুদিন।’

নতুন খসড়া প্রস্তাবে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আট বছরের একটি সময়সীমা রাখা হয়েছে। যারা অন্তত আট বছর ধরে কোনও নথি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছেন, তাদেরই এ নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

অনথিভুক্তদের মধ্যে তথাকথিত ড্রিমাররাও রয়েছেন। এ ড্রিমাররা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী নাগরিকত্বের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। গ্রিন কার্ড পেলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন উপার্জনের উদ্দেশ্যে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ড্রিমাররা ছাড়াও টেম্পোরারি প্রোকেটটেড স্ট্যাটাসভুক্ত (টিপিএস) অনেকে আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে বাস করছেন। বাইডেন প্রশাসন এ অভিবাসীদের নাগরিকত্বের বিষয়টিও সংস্কারে আনবে বলে জানা গেছে। ট্রাম্পের আমলে সংস্কার করা অভিবাসন নীতিমালায় অভিবাসীদের ‘অ্যালিয়েন’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল। আর বাইডেনের সংস্কারে তাদের ‘নন সিটিজেন’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হবে।

ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর বব মেনেনদেজ এএফপিকে বলেন, ‘১ কোটি ১০ লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। স্বচ্ছ ও স্পষ্ট অভিবাসন নীতিমালা সংস্কারে আমাদের অনেক কিছু করার আছে, যাতে কেউই এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়। আমাদের ড্রিমার, টিপিএসধারী, চাষাবাদে যুক্ত, বন্ধুরা ও প্রতিবেশীরা কেউই যেন বাদ না যায় তাই আমাদের সংস্কারের লক্ষ্য।’ শীর্ষ এ সিনেটরের মতে, অধিকাংশ অনথিভুক্ত অভিবাসীই কৃষি, খাদ্য ও স্বাস্থ্য খাতে কাজ করছেন। কোভিড-১৯ মহামারীর এ সময়ে স্বাস্থ্য খাতে বহু অভিবাসী নিরলস শ্রম দিয়েছেন তাদের জীবন বাজি রেখে। ডেমোক্র্যাটরা ওই অভিবাসীদের সম্মান জানাতে চায় বলেও জানান মেনেনদেজ।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন ড্রিমার্সদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন, তখন বাইডেন ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ফলে এখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম ও অন্যতম কাজটিই হলো ওবামা আমলের অভিবাসন নীতিমালার আদলে সংস্কার করা।