শাহেদ মিজান, সিবিএন:

বর্তমানে শাক-সবজি ও ফলমুলে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক, ফরমালিন, কার্বোরাইড। অধিক ফলন, পোকামাকড় থেকে রক্ষা এবং বেশিদিন সংরক্ষণ ও ফল তাড়াতাড়ি পাকানোর জন্য এসব পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। একইভাবে পোল্ট্রির মুরগি ও দেশী মাছের দ্রুত বাড়ন এবং সুস্থতার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এন্টিবায়োটিক ও খাবার। এসব কারণে ক্ষতিকর চিন্তা করে বহু মানুষ পোল্ট্রি মুরগি, দেশীয় চাষের মাছ এবং অনেক ফলমুল খাচ্ছে না। মূলত, ক্যান্সারসহ নানা রোগের ভয়ের কারণে খাওয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা এই ভয় দেখান।

কিন্তু পুষ্টি বিজ্ঞান বলছে সম্পূর্ণ উল্টো কথা! বিজ্ঞান বলছেৎ, কীটনাশক, ফরমালিন, কার্বোরাইড দেহের জন্য ক্ষতিকর নয়! কারণ ক্ষতিকারক যে মাত্রা তা শোষণ করার ক্ষমতা রয়েছে মানবদেহের। বরং না খাওয়াতে যে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে তাতেই মানুষের ক্ষতি হচ্ছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার আয়োজিত চার দিনের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এমন কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সদস্য ও পরিচালক এবং দেশের খ্যাতনামা পুষ্টিবিজ্ঞানী ড. মনিরুল ইসলাম। চার দিনের কর্মশালায় তিনি খাদ্য নিয়ে বাংলাদেশর প্রচলিত ধারণা, বিশ্বপ্রেক্ষাপট ও আগামীর করণীয় সম্পর্কে আদ্যোপান্ত আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ফিস এই কর্মশালার আয়োজন করেন।

দেশের খাদ্য বিভাগের সাথে সরাসরি জড়িত এবং লন্ডনের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা এই পুষ্টি বিজ্ঞানীর আলোচনা থেকে অতিপ্রয়োজনীয় কিছু তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।

এই খাদ্য বিজ্ঞানীর মতে, মানুষের দেহের বৃদ্ধির জন্য পুষ্টির দরকার। বিভিন্ন খাবার থেকে পুষ্টি উৎপাদন হয় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় শাক-সবজি ও ফলমুল। তাই বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং রোগপ্রতিরোধের জন্য প্রতিদিন নিয়মমাফিক শাক-সবজি ও ফলমুল খেতে হবে। একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রতিদিন প্রতিদিন ১০০গ্রাম শাক, ২০০ গ্রাম সবজি ও ১০০ গ্রাম ফলমুল খেতে হবে। শাক-সবজি ও ফলমুল কম খাওয়া বেশ ক্ষতিকর। তরকারি কুচি কুচি করে কাটলে গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। শাক রান্নায় বাড়তি পানি দেয়ার দরকার নেই। চাল বেশি করে ধোয়া যাবে না। বয়স ৪০ বছরের পর মাংশ কম খেতে হবে, শাক-সবজি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে।

এই খাদ্য বিজ্ঞানী মতে, ফল কেটে অনেক্ষণ রাখা যাবে না। সম্ভব হলে সবজি ও ফলের খোসা না পেলে রান্না করতে হবে। সব সবজির অধিকাংশ ভিটামিন খোসায় থাকে। বিশেষ করে আপেল। আপেল ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। খাদ্য শুধু পুষ্টিযুক্ত হবে না; নিরাপদ হতে হবে। ভেজাল খাবার পরিহার করতে হবে। পথের খাদ্য ভালো, তবে নিরাপদ হতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করতে হবে। ডায়েট কোকে কোনো লাভ নেই; বরং ক্ষতিকর। ৩০ বছরের পর লবণ খাওয়া কমাতে হবে। কাঁচা লবণ মোটেও খাওয়া যাবে। আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে। বেশি খেলে পাকস্থলি কোলন ক্যান্সার এবং কিডনি ও লিভার ক্ষতি হয়। হাইপ্রেশার হয়।

চকোলেট, চিপস, পাউরুটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। মধ্য ও ধুমপান পরিহার করতে হবে। লিপস্টিক ব্যবহার ক্ষতিকর। পোড়া তেল মারাত্মক ক্ষতিকর। মাঝে মাঝে তেল পরিবর্তন করতে হবে।

ফরমালিনে ভীতি উল্লেখ করে পুষ্টি বিজ্ঞানী ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ফরমালিন নামে কোনো কিছু বাংলাদেশের খাদ্যে মিশানো হয় না। এটি শাক-সবজি ও ফল সংরক্ষণে কোনো ভূমিকা রাখে না। তবে সব খাদ্যে প্রাকৃতিকভাবে ফরমালিন থাকে। সংরক্ষণের জন্য অন্য কিছু পদার্থ ব্যবহার করা হয়। ব্যবহৃত এসব পদার্থ সহনশীল মাত্রার হয় বলে দেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। বাংলাদেশের চেয়ে অন্তত ১৫ গুণ এসব পদার্থ ব্যবহার করে উন্নত দেশগুলো।

তিনি বলেন, পোল্ট্রি মুরগি, ডিম এবং চাষকৃত মাছে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক মানবদেহের জন্য ক্ষতি করে না। কেননা যে পরিমাণ এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় তা মানবদেহ শোষণ করার ক্ষমতা আছে। তবে মুরগির মাথা, কলিজা, ঘিলা ও হাড়ে কিছুটা ক্ষতির মাত্রা রয়েছে। তা না খাওয়া উচিত। কাঁচা, অর্ধসিদ্ধ ডিম খাওয়া যাবে না। পুরোপুরি সিদ্ধ করে খেতে হবে। হার্ট এ্যাটাকে ডিমের ভূমিকা নেই, তবে কোলেরেস্ট্রল বাড়ায়।

তিনি জানান, পলিথিনে ক্ষতিকারক রাসায়নিক রয়েছে। কোনো খাদ্যে পলিথিনের ভাপ লাগানো যাবে না। খাওয়ার একঘণ্টা আগে ও একঘণ্টা পরের মধ্যে চা খাওয়া যাবে না। ছোট বাচ্চাদের খালি পেটে লিচু খাওয়ানো যাবে না। এতে মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। লবণ রান্নার শেষে ব্যবহার করতে হবে। রান্নার সময় তরকারির ঢাকনা তোলা যাবে না। ছোট মাছের মাথা ফেলা যাবে না।