জসিম উদ্দিন:
পর্যটন শহর কক্সবাজারে হঠাৎ বেড়েছে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা। বিভিন্ন সড়ক উপসড়কে দেখা মিলছে বখাটে, ছিটকে চোরদের আনাগোনা। দোকানে, সড়কে চলছে সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি।
সম্প্রতি কয়কটি খুনের ঘটনায় সর্বত্র বিরাজ করছে আতঙ্ক। হোটেল মোটেল জোনকেন্দ্রিক অপরাধীচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো: রাশেদ নিহতের ঘটনার সুত্র ধরে কক্সবাজার জেলার সব পুলিশের এক যোগে বদলী করা হয়। এখানে নিয়োগ করা হয়েছে নতুন পুলিশ সদস্য, যারা এখনো অপরাধীদের শনাক্ত কিংবা বিভিন্ন অপরাধস্পটের সঙ্গে পরিচিত হয়নি। এদন সুযোগে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এই সুযোগে দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়ানো অপরাধীরা একে একে ফিরেছে। -মনে করছে স্থানীয়রা।
এদিকে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনে ফিরে এসে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বহু আলোচিত ব্ল্যাকমেইলার শহিদ (প্রকাশ) বর্মায়া দালাল শহিদ।
এরমধ্যে বেশ কয়েকজন পর্যটকের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে শহিদের বিরুদ্ধে।এতে করে পর্যটক ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হলেও রহস্যজনক কারনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সানিয়া মির্জা নামের এক নারী পর্যটকের দাবি, কুমিল্লা থেকে গত ( ১জানুয়ারী) সকালে কক্সবাজারে এসে শহিদ স্বরণি এলাকার নিউ এবিএম রিসোর্টে উঠেন তিনি। ওইদিন রুম থেকে বের হয়ে বীচে ঘুরাঘুরির পর রাতে হোটেলে ফিরে এসে দেখতে পান তার রুমের দরজা খোলা। এসময় তিনি এক ব্যক্তিকে রুম থেকে তার ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখেন। পরে জানতে পারেন তার নাম শহিদ।
বিষয়টি হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানালে শহিদ নিজেকে হোটেলের মালিক হিসেবে পরচিয় দেন এবং বাড়াবাড়ি করলে ইয়াবা দিয়ে ওই নারী পর্যটককে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেন।
ভুক্তভোগী সানিয়া তার ব্যাগে ১৬ হাজার টাকা একটি স্বর্ণের চেইনসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ছিল উল্লেখ করে বিষয়টি সদর থানা পুলিশকে অবগত করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন।
একইভাবে ক্যামেরা ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন তারেকুল ইসলাম নামের আরেক পর্যটক।
তিনি জানান,গত ৩ জানুয়ারি নিউ এবিএম রিসোর্টে রুম ভাড়া নেয়ার রাতে শহিদ নামের এক ব্যক্তি তার কাছ থেকে এসব ছিনিয়ে নেয়। তাকেও বাড়াবাড়ি করলে ইয়াবা ও নারী দিয়ে পুলিশকে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন শহিদ ।
তারেকের অভিযোগ, বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
এর আগে কামাল নামের এক পর্যটকের রুমে রাতে মেয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে জিম্মি করে ছবি তোলে ৫০ হাজার টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠে শহিদের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়াও কয়েকজন তরুণীকে জোর করে ইয়াবা সেবন ও পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে শহিদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিষয়ে জানেত চেয়ে শহিদের ব্যবহৃত নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নিউ এবিএম রিসোর্টে গিয়ে শহিদকে পাওয়া যায়নি।
তবে এবি এম রিসোর্টের মালিক শাহ বেলাল সব অভিযোগই স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন,বাবু নামের একজনকে আমি আমার কটেজটি ভাড়া দিয়েছি।তার আত্মীয় পরিচয়ে শহিদ নামের একজন চিহৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারী ওই কটেজে থাকেন। সেখানে প্রতিরাতে এক অসৎ পুলিশ অফিসারের সহযোগীতায় শহিদ পর্যটকদের মেয়ে বা ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ পেয়েছি।
বিষয়টি আমি পুলিশ,র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাকে অবগত করেছি।কিন্তুু কেউ শহিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অথচ শহিদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও ওয়ারেন্ট রয়েছে। তাই এসবের দায় আমি নিবো না
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সিন্ডিকেট করে শহিদ প্রায় হোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে ইয়াবা সাপ্লাইয়ের পাশাপাশি নানা কায়দায় পর্যটকদের জিম্মি করে টাকা আদায় করে যাচ্ছেন। তবে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে অতীতে দেখাগেছে পুলিশ অভিযোগকারীদের উল্টো হয়রানি করেছে।তাই ভয়ে কেউ আর শহিদের ব্যাপারে প্রশাসনকে কেউ কিছু বলে না। এক শহিদের কারনে পর্যটকদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।তার কারণে একদিন পর্যটন শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
এ বিষয়ে কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, পুলিশ না হয় বদলি হয়ে নতুন এসেছে। তাই শহিদ সম্পর্কে জানা নাই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
শুধু শহিদ নয় অপরাধী যেই হোক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েন কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, করোনা দুর্যোগের আগে শহিদের ইয়াবা বাণিজ্য, পর্যটকদের জিম্মি করে টাকা আদায় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের কারনে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে শহিদ আত্মগোপনে চলে যায়। তবে সিনহা হত্যার পর এক যুগে জেলার সব পুলিশ বদলী হওয়ার সুযোগে আবারো পর্যটন শহরে ফিরে এসেছেন শহিদ।