মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলো থেকে তৃতীয় দফায় প্রথম ট্রিপে যাওয়া এক হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে পৌঁছেছে। শুক্রবার ২৯ জানুয়ারি বেলা ২ টার দিকে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর ৫টি জাহাজ করে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা সেখানে পৌঁছায়। সংশ্লিষ্ট সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এর আগে শুক্রবার ২৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম বোট ক্লাব থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেয় রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌ-বাহিনীর ৫টি জাহাজ। বৃহস্পতিবার ২৮ জানুয়ারী এক হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীকে কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্প গুলো থেকে ৩৫টি বাসে করে চট্টগ্রামের বিএএফ শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার সাকল সাড়ে ৯ টার দিকে তাদের জাহাজে তোলা হয়। জাহাজে করে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ভাসনচরে গ্রহন করেছেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় দলটিকে ভাসানচরে নেওয়ার ঠিক এক মাস পরে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দলটি সেখানে গেল।

এর আগে গত বছরে ৪ ডিসেম্বরের এবং ২৯ ডিসেম্বর দুই ধাপে ৩ হাজার ৪৪৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভাসানচরে পৌঁছানো রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৮০১ জন পুরুষ, ৯৮৭ জন নারী এবং ১৬৫৮ জন শিশু। এর আগে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে গত বছরের মে মাসে ভাসানচর নিয়ে যায় সরকার।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আগে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরনার্থী সহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ৩৪ ক্যাম্পে বসবাস করছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপ কমাতে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে নোয়াখালীর ভাসানচরকে হাতিয়া উপজেলার অধীনে দেশের ৬৫০ তম পূর্ণাঙ্গ একটি থানা হিসাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গত ১৯ জানুয়ারী উদ্বোধন করেছেন।

এদিকে, শুক্রবার ২৯ জানুয়ারী আরো ১৩৫০ রোহিঙ্গা শরনার্থী ভাসানচরে যেতে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে। এটি হবে তৃতীয় দফায় রোহিঙ্গা শরনার্থী স্থানান্তরের দ্বিতীয় গ্রুপ। তাদের অধিকাংশকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্যাম্প থেকে ট্রানজিট পয়েন্ট উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আনা হয়েছে। শুক্রবার সকালেও কিছু রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প থেকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আনা হয়েছে। উখিয়া ডিগ্রি কলেজ এর মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য নিবন্ধনের কাজও চলছে সেখানে। তবে স্থানান্তরের জন্য উখিয়া ডিগ্রি কলেজ এর মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে আনা রোহিঙ্গা শরনার্থীর এ সংখ্যা কমবেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সুত্রটি।