সংবাদদাতা:
২৪ জানুয়ারি, আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রোহিঙ্গা আগমনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজারের স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন টেকসই করতে রোহিঙ্গাদের জন্য মায়ানমার পাঠ্যক্রমে শিক্ষাকর্মসূচি প্রণয়নেরও সুপারিশ করেছে কক্সবাজারে উন্নয়ন ও মানবাধিকার বিকাশে সক্রিয় ৫০টি স্থানীয় এনজিও ও সুশীল সমাজ সংগঠনের এই নেটওয়ার্ক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১৭ সালে নতুন করে রোহিঙ্গাদের আগমন শুরু হলে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি স্কুলকে সেনা সদস্যদের অস্থায়ী ব্যারাক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, অন্যদিকে অনেক রোহিঙ্গাও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবনে আশ্রয় নেয়। এতে করে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কয়েকমাস শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখে। মানুষের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় এবং ত্রাণ কর্মসূচিতে ব্যবহৃত যানবাহনের ব্যাপক ভীড়ের কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। অনেক কলেজ ছাত্র এবং শিক্ষক অধিকতর আয়ের সুযোগ পেয়ে ত্রাণ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদান করেন। একটি বিদ্যালয়ের ১০জন শিক্ষকের মধ্যে ৭জনই শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য চাকরিতে যোগ দেন। এত করে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে। রোহিঙ্গা কর্মসূচিতে শিক্ষা এখনো তুলনামূলকভাবে অনেক কম গুরুত্ব পাচ্ছে বলে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈশ্বিক জরুরি ত্রাণ কর্মসূচির মাত্র ২.৬% বরাদ্দ হয়েছে শিক্ষা খাতে।
বিজ্ঞপ্তিটিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে ৬-১৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশুদেরকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হলেও, ১৫-২৪ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী এবং যুবক-যুবতীদের ৮৩%-ই শিক্ষামূলক কর্শসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। বর্তমানে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর প্রায় ৬ হাজার শিক্ষা কেন্দ্রে ৩ লাখেরও বেশি শিশু-কিশোরের জন্য লেভেল ১-৪ পর্যন্ত শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে। ১৫ বছর বেশি বয়সীদের শিক্ষার সুযোগ না থাকা এবং মায়ানমার পাঠ্যক্রমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। রোহিঙ্গারা নিজের দেশে ফিরে যেতে চায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার আগ্রহও যথেষ্ট। কিন্তু গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা তাদের নিয়মিত পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন। ফিরে গেলে তাদের শিক্ষা জীবন একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে বলেই তাদের আশংকা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটিতে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরা হয়, সেগুলো হলো:
১. স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা নিশ্চিত করতে দাতা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। পাঠ্যক্রমে কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা এবং কারিগরি কলে প্রতিষ্ঠা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
২. মায়ানমার ভাষায় গৃহীত পাঠ্যক্রম এবং এই শিক্ষা কার্যক্রমকে মায়ানমার সরকার কর্তৃক স্বীকৃত করার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এজন্য মায়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
৩. মায়ানমার পাঠ্যক্রমে পাঠদানে সক্ষম পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদানে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থাগুলোকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কক্সবাজার শিবিরগুলোতে শিক্ষিত রোহিঙ্গা রয়েছে, তাদের শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে।
৪. নতুন ও কার্যকর একটি পাঠ্যক্রম তৈরি এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণে দেশি বিদেশি শিক্ষাবিদদের সম্পৃক্ত করতে হবে।