তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম :

চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে থাকা (খালাস না করা) প্রায় ১১শ টন পেঁয়াজ নিলামে বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। নষ্ট হওয়া বা পচে যাওয়ার আগেই আমদানিকৃত পেঁয়াজগুলো চলতি বছরের প্রথম নিলাম ডাকে বিক্রির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র পেঁয়াজের চালান দিয়ে ই-অকশনের মাধ্যমে ২০ লটে থাকা ৪০টি কনটেইনারে মোট ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৫১৯ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করবে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

পেঁয়াজের সংকটকালে সম্প্রতি এই পেঁয়াজগুলো নিউজিল্যান্ড, চায়না, পাকিস্তান ও মিসর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমদানিকারকেরা ওই পেঁয়াজ খালাস না করায় নিয়ম অনুযায়ী সেগুলো নিলামে তুলে বিক্রি করছে কাস্টমস।

জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশের পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশে থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু করলো ঠিক তখনই আবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করে। ভারতের পেঁয়াজ অন্যন্য দেশের তুলনায় সস্তা বলে ওই দেশের অনেক পেঁয়াজ দেশে ঢুকে যায়। যার ফলে বন্দরের ভেতরে থেকে যাওয়া পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা খালাস করেনি। কারণ বন্দরের যাবতীয় খরচ পরিশোধ করে ওই পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করতে গেলে আমদানিকারকের আরো বড় আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। তাই সম্ভবত অনেকে বন্দর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেও খালাস করেনি।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এসব পেঁয়াজ আমদানি পর্যায়ে দাম পড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। কিন্তু বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। ফলে বড় অংকের লোকসান এড়াতে আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ খালাস নিচ্ছেন না।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি এবং সংকট তৈরি হওয়ার পর গত কয়েক মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে আরও প্রায় ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ। প্রায় একমাস ধরে এসব পেঁয়াজ বন্দরে পড়ে থাকলেও আমদানিকারকরা সেগুলো খালাস নিচ্ছেন না। পেঁয়াজের চালান খালাস নিতে আমদানিকারকদের দাপ্তরিক চিঠি দিয়েও সাড়া মিলছে না।’

এদিকে, নিলাম সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজ কিনতে আগ্রহী দরদাতারা আজ ১৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টা থেকে পরদিন ২০ জানুয়ারি বিকেল ৫টা পর্যন্ত ই-অকশনের দরপত্র জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং কাস্টমস হাউসের ওয়েব সাইটে ই-অকশন অপশনে গিয়ে জমা দিতে পারবেন।

ইতিমধ্যে দরদাতারা সরেজমিনে পেঁয়াজ দেখে এসেছেন। ই-অকশনে কোন প্রকার অফলাইন কপি বা ছাপা দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। দরপত্র জমা দিতে হবে অনলাইনেই। তবে অকশনের ক্যাটালগ অনলাইন ছাড়াও তিনটি স্থান থেকে সংগ্রহ করতে পারবে পেঁয়াজ কিনতে আগ্রহী দরদাতারা।

সরকারি নিলাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কে এম কর্পোরেশন প্রধান কার্যালয়, ৩০৬, স্ট্যান্ড রোড, মাঝিরঘাট, চট্টগ্রাম থেকে এবং বন্দর স্টেডিয়াম এর বিপরীতে কাস্টম অকশন শেড থেকে ক্যাটালগ সংগ্রহ করা যাবে।
এছাড়া ঢাকার দরদাতারা ৮০, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ঠিকানা থেকেও ক্যাটালগ সংগ্রহ করতে পারবেন।

নিলামের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতা নিলাম কমিটি অনুমোদিত হওয়ার পর গোলাভাড়া ও পোর্টচার্জ ব্যতিরেকে উদ্ধৃতমূল্য ৫ শতাংশ হারে আয়কর ও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ১২ কার্যদিবসের মধ্যে জমা দিয়ে পেঁয়াজ ‘যেখানে যে অবস্থায় এবং যে গুণগতমানে আছে’ সে অনুযায়ী খালাস নিতে হবে। অন্যথায় নিয়ম অনুযায়ী জামানতের অর্থ সরকারি খাতে বাজেয়াপ্ত করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে পার্থক্য মাত্র ২ লাখ টনের। বছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৩ লাখ টনের বেশি। আর চাহিদা রয়েছে ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন। তারপরও শুধু নষ্ট হওয়ার কারণে বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কারণ দেশে উৎপাদিত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য যে আধুনিক তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায়ে নেই।