জালাল আহমদঃ
সাংবাদিকতা সৃজনশীল মানুষদের নেশা এবং পেশা।সমাজের সৃজনশীল মানুষেরাই সাংবাদিকতায় আসে।আমার দেখা একজন দক্ষ এবং অসাধারণ সৃজনশীল সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান যিনি গত ১১জানুয়ারী আমাদের ছেড়ে পরকালে চলে গেছেন।
মিজানুর রহমান খান এর সাথে প্রথম দেখা ২০০৯ সালে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে প্রথম আলো কর্তৃক আয়োজিত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ -৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।মিজানুর রহমান খান গিয়েছিলেন অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে এবং আমি গিয়েছিলাম সংবর্ধিত ছাত্র হিসেবে।২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি চট্টগ্রামের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা দৈনিক কর্ণফুলীতে চবির সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করেছি।ঐ পত্রিকাটি ছিল একটি বিশেষ দলের পত্রিকা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি বৃদ্ধি নিয়ে রিপোর্ট করায় চাকরি পানিতে গেল।আমি তখন খুবই হতাশ।আল্লাহর বিশেষ রহমত আমার উপর আছে। আমি যখনই কিছু একটা হারায়,তখনই কয়েকদিন পরে এর চেয়ে ভালো কিছু পেয়ে যাই।সিদ্ধান্ত নিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব না।তাই ফরম তোলার একেবারে শেষদিনে ২০১৩ সালের ৩০ সেপেম্বর রাত ১১টায় অনলাইনে ফরম তুলে পরদিন ব্যাংকে টাকা জমা দিলাম।মাত্র কয়েকদিনে কিছু শিট এবং গাইড বই পড়ে ১নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে ১৬৩৭ তম মেধাতালিকায় অবস্থান করেছিলাম।ঘ ইউনিটে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর আসন সংখ্যা প্রায় ১হাজারের মত।কিন্তু আস্থা এবং বিশ্বাস ছিল যে, বাংলা এবং ইংরেজিতে ভালো Condition mark থাকায় ভালো একটা সাবজেক্ট পাব।১ম দফা এবং ২য় দফা ভাইভাতে আমার রোল না আসায় আমার সন্দেহ হয়, নিশ্চয়ই পর্দার আড়ালে কেউ বা কারা ষড়যন্ত্র করছে?কি আশ্চর্য? আমার সন্দেহ সত্য হয়ে গেল।তৎকালীন ডিন স্যার আমাকে বাদ দিয়ে ১৭৭২সিরিয়ালে থাকা এক মেয়ে কে ভর্তি করালেন।পরে ডিনের বিরুদ্ধে ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মহোদয়ের কাছে অভিযোগ করার পরেও ডিন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাই এক মানবাধিকার আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে রিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।২০১৪ সালের ১ এপ্রিল প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্থ প্রথম আলোর যুগ্ন সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের কাছে হাজির হই। মিজান ভাই প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি আসিফ ভাই কে ঘটনা তদন্ত করে রিপোর্ট করার জন্য আদেশ দিলেন। ডিন অনেকটা চাপের মুখেই আমাকে ভর্তি করাতে বাধ্য হলেন।ভর্তি হলাম টেলিভিশন এন্ড ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগে । তরুণ প্রজন্মের সাথে মিশুক মিজান ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।নগরজীবনের পথচলায় যদি কেউ আমাকে সহযোগিতা করে থাকে, তিনি মিজান ভাই ।তিনি আমাকে সুন্দর, আলোকিত এবং উন্নত জীবনের ছোঁয়ার কথা বলতেন। কিন্তু আমি আজ নিজেই সেই উন্নত জীবনের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত।প্রথম আলোতে মিজান ভাই ছিল আমার একমাত্র শুভাকাঙ্খী।গঠনমূলক উপদেশ দেওয়ার মত কেউ আজ নাই।উনার মতো সাংবাদিককে সারাজীবন মিস করবো।উনার জীবনটা তো দেশ, জাতি, মাটি ও মানুষের জন্য বিসর্জন দিয়েছেন।আইনের ছাত্র উনি ছিলেন না।কিন্তু আইন নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করতেন।নানা যুক্তি দিয়ে আইনের কঠিন ভাষা কে পাঠকের জন্য সহজ করে তুলতেন।আইন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংখ্যালঘুদের অধিকার, আইনের প্রয়োগ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মিজানুর রহমান খান আজীবন লেখালেখি করে গেছেন। গত ১১ জানুয়ারি সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন লাখো পাঠকের প্রিয় সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান। মিজানুর রহমান খান হাসিমুখে কথা বলতেন।হাসিমাখা সেই মুখ আর দেখা যাবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা মরহুমকে বেহেশতের সর্বোচ্চ স্তর জান্নাতুল ফেরদৌসের মর্যাদা দান করুক। আমিন।