সিবিএন ডেস্ক:
২৩টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৮ জন প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনটি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী, একটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও একটি পৌরসভায় জাসদের প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে দেশের ৬০টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলে। ভোটগ্রহণ করা হয় বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনে কয়েকটি স্থানে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ভাঙচুর ও নির্বাচন বর্জনসহ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ শেষ হয়।

আওয়ামী লীগের যাঁরা জয়ী : আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন- বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে মতিউর রহমান, নওগাঁর নজিপুরে মো. রেজাউল কবির চৌধুরী, রাজশাহীর কাকনহাটে আতাউর রহমান খান ও ভবানীগঞ্জে আবদুল মালেক মণ্ডল, নাটোরের নলডাঙ্গায় মো. মনিরুজ্জামান মনির, গোপালপুরে রোকসানা মোর্ত্তজা লিলি ও গুরুদাসপুরে মো. শাহনেওয়াজ আলী, কুষ্টিয়া সদরে আনোয়ার আলী, কুমারখালীতে মো. সামসুজ্জামান ও মিরপুরে মোহা. এনামুল হক, বাগেরহাটের মোংলায় শেখ আব্দুর রহমান, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বিল্লাল সরকার ও ফুলবাড়িয়ায় গোলাম কিবরিয়া, নরসিংদীর মনোহরদীতে আমিনুর রশিদ সুজন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সিপার উদ্দিন আহমদ ও কমলগঞ্জে জুয়েল আহমদ, কুমিল্লার চান্দিনায় মো. শওকত হোসেন ভূইয়া ও নোয়াখালীর বসুরহাটে আবদুল কাদের মির্জা।

এর আগে পাবনার ভাঙ্গুরায় আওয়ামী লীগের মো. গোলাম হাসনাইন, নারায়ণগঞ্জের তারাবতে হাছিনা গাজী ও পিরোজপুর সদরে হাবিবুর রহমান মালেক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন।

নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির তিনজন এবং জাসদ ও আওয়ামী লীগের একজন করে মেয়র পদপ্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে বগুড়ার সান্তাহারে বিএনপির তোফাজ্জল হোসেন, হবিগঞ্জের মাধবপুরে হাবিবুর রহমান মানিক ও নবীগঞ্জে ছাবির আহমদ চৌধুরী জয়ী হয়েছেন। রাজশাহীর আড়ানীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলী ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জাসদের আনোয়ারুল কবির টুটুল নির্বাচিত হয়েছেন।

এর আগে কয়েকটি পৌরসভায় ককটেল বিস্ফোরণ, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্র দখল, প্রকাশ্যে ভোট দেওয়া ও ভোটে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বাগেরহাটের মোংলা, রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, পাবনার ঈশ্বরদী ও কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভার বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। একই কারণে মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া সব প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

ভোটগ্রহণের শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চলমান পৌরসভা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না। আজ শনিবার আমি সাভার পৌরসভার তিনটি ভোটকেন্দ্রের ১৮টি বুথ পরিদর্শন করি। দুপুর ১টা পর্যন্ত ওইসব ভোটকেন্দ্রে সাত হাজার ৩১১ জন ভোটারের মধ্যে এক হাজার ২৩২ জন ভোট প্রদান করেছেন। তিনটি বুথে আমি তিনজন বিরোধী দলীয় প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দেখতে পাই। কিন্তু অন্য কোথাও এজেন্ট ছিলেন না। এ ছাড়া সাভার পৌর এলাকায় আমি বিরোধীদলীয় প্রার্থীর কোনো পোস্টার দেখতে পাইনি। এমতাবস্থায়, এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না। যেকোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তা সিদ্ধ হয় না। এ ছাড়া পৌরসভার নির্বাচনে ক্রমাগত সহিংসতা বেড়ে চলেছে। সহিংসতা ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না।’

পরে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, ‘পাঁচ-সাতটি স্থানে বাদে আমাদের ৬০ পৌরসভার সব কেন্দ্রে সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। প্রচুর ভোটার সেখানে ভোট দিয়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুষ্কৃতিকারীরা ভোটকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে। তাদের উদ্দেশ্যই থাকে যে, সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে না হতে পারে। সেটাকে ব্যর্থ করে দিয়ে, আমি বলব যে, ইসি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনাদের সবার সহযোগিতায় সুন্দর একটি নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। ৪টা পর্যন্ত ভোট হয়েছে, কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ এখনো ভোট দিচ্ছে (তখন সময় প্রায় ৬টা)। যারা ৪টার আগে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের এখনো ভোটগ্রহণ চলছে। আমরা আশা করছি কোথাও কোথাও ৭০ ভাগ ভোট পড়বে, কোথাও তা ৮০ হবে। এভারেজ বলতে গেলে, ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ ভোট পড়বে বলে আমি মনে করি।’

দেশের ৬০টি পৌরসভা নির্বাচনে আজ ভোট শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে। ভোটের শুরুর পর কিছু পৌরসভায় ভোটকেন্দ্রে গোলযোগ দেখা দেয়।

গাইবান্ধা পৌরসভার সরকারি টেক্সটাইল স্কুলকেন্দ্রে দুই মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যালট পেপার ছিনতাই ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ফেনীর দাগনভূঞার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটনা ঘটেছে।

নাটোরের লালপুরে ভোট চাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগপ্রার্থী রোকসানা মোর্ত্তজা লিলি।

মোংলা পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের ১২টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হয়েছে। তিন নম্বর ওয়ার্ডের চালনা বন্দর ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আবদুর রহমান। এর পর পরই ভোট দিয়েছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপির প্রার্থী মো. জুলফিকার আলী। তবে এর ঘণ্টা খানেক পরই কেন্দ্র দখল, প্রকাশ্যে ভোট দেওয়া ও ভোটে বাধা দেওয়ার অভিযোগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির প্রার্থী। একই অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন চারজন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থীসহ ১২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী।

এ ছাড়া নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, পাবনার ঈশ্বরদী, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভার বিএনপির প্রার্থী। মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া বাকি প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন।

বাকি পৌরসভাগুলোয় বড় ধরনের অভিযোগ ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে ভোট। কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী, মিরপুর ও ভেড়ামারায় উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদর পৌরসভার সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ। নোয়াখালীর বসুরহাটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।

এ ছাড়া সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও জগন্নাথপুর পৌরসভা, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, কিশোরগঞ্জ সদর, বান্দরবানের লামা, বগুড়ার শেরপুর, সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার, নারায়ণগঞ্জের তারাব, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরসভায় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। তবে সাভার পৌরসভায় ভোটারের খুব একটা উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি। -এনটিভি