– খোরশেদ আলম 
( মুক্তিযুদ্ধে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া মানুষগুলোকে উৎসর্গ করা হলো )

৭ ই মার্চের বঙ্গবন্ধু’র সেই ঐতিহাসিক ভাষণ
— যার যা আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করুন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলুন, এবারের সংগ্রাম — মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম — স্বাধীনতার সংগ্রাম ।
বঙ্গবন্ধুর যেই ডাক – সেই কাজ….বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল ।
আমার মা এক থলে শুকনো মরিচ দিয়ে বলল, যাও বাজার থেকে মরিচ পিসিয়ে আন ।
আমি জানতে চাইলাম কি জন্য ?
পাকিস্তানী সৈন্যরা আসলে ওদের চোখে-মুখে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং হাতে কিছু টাকা দিয়ে
বলল, কামারের দোকান থেকে একটা সেল কিনে আনবে না হয় বল্লম ।
কিছুদিনের মধ্যে দেখলাম আশেপাশের প্রত্যেক বাড়ীতে মরিচের গুঁড়ো , সেল, লম্বা দা, কিরিচ, বল্লম, হাতে বানানো বাঁশের ঠেরা এবং বালিভর্তি বস্তা ইত্যাদি মজুদ করে রাখল পাকিস্তানী সৈন্যদের মোকাবিলা করার জন্য । ছোট বড় সকলের চোখেমুখে ছিল এক অদম্য সাহস ।
ব্যাপারটি ছিল যারা পালিয়ে মুক্তিযুদ্বে গেছে, ইন্ডিয়া, বার্মায় আশ্রয় নিয়েছে তারা একরকম বেঁচে গেছে কিন্তু যারা রয়ে গেল তাদের তো প্রতিনিয়ত শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং সত্যিকার অর্থে হয়েছেও তাই ।অনেকের মা-বোনদের ধরে নিয়ে গেছে, সম্ভ্রম হারিয়েছে, মেরে ফেলা হয়েছে, যুবক ভাইদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে ।
প্রতিনিয়ত যারা বাজারে গেছে , অফিস –
আদালত, দোকান, ব্যবসা বানিজ্যের জন্য বেরুতে হয়েছে তারা রাস্তাঘাটে পাকিস্তানী হানাদার
বাহিনীর ভয়, সংশয়, নানা প্রশ্নের উওর যেমন
আপ মুক্তি হে, কাপড় বি উতার দো, মুসলমান হো তো কলমা বলিয়ে, কলমা ইত্যাদি অনেক ধরনের জবাবদিহিতা । যেজন্য অনেক রয়ে যাওয়া হিন্দুর কলেমা মুখস্ত করতে হয়েছিল বাঁচার তাগিদে আবার কেউ কেউ মনের বিরুদ্ধে শুধু বেঁচে থাকতে মুসলমানও
হয়েছিল । এভাবে একরকম অঘোষিত যুদ্ধের মধ্য
দিয়ে পাকিস্তানী হানাদারদের প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করে আল্লাহ সহায় ছিল বলে মানুষ বেঁচেছিল ।
রয়ে যাওয়া এই মানুষগুলোর প্রতিনিয়ত যুদ্ধের কোন স্বীকৃতি নেই, সার্টিফিকেট নেই তবে হ্যাঁ স্বীকৃতি একটা অবশ্যই আছে ,
তা আমাদের বিজয় — ১৬ ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ ।