– খোরশেদ আলম

( নতুন প্রজন্মকে উৎসর্গীকৃত আমার এ লেখা )

রাজাকারের মৃত্যু দেখেছি ।আব্দুল হাকিম , ছিল রাজাকার । বাসা ছিল প্রধান সড়কের সিকদার মহলের পেছনের গলি । মুক্তি যুদ্ধকালীন সময় হঠাৎ একদিন সকালে শুনি রাজাকারের মৃত্যু হয়েছে, মানুষ দেখতে যাচ্ছে আমরাও গেলাম । বাসার উঠানে মৃতদেহ শুয়ে রাখা হয়েছে । ওখানে মানুষদের বলাবলি করতে শুনলাম গতরাতে ঈদগাঁও ব্রীজে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানী হানাদার – রাজাকারদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং সেই যুদ্ধে রাজাকার আব্দুল হাকিম মারা গেছে ।
তারিখ মনে নাই । খুব সম্ভবত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ ১৯৭১ …সময় ১১.০০ ঘটিকা বা তার কিছু কম/বেশী ।
কক্সবাজারের আকাশে বিমান, যুদ্ধে ব্যবহৃত বোমারু বিমান এবং বোম্বিং আর বোম্বিং, সেলিং।
মনে হল, আজ কক্সবাজার ধ্বংস হয়ে যাবে । মুরুব্বিরা মাটির গর্তে আমাদের ঢুকিয়ে দিল । কিছুক্ষণের মধ্যে বোমারু বিমান কয়েকবার চক্কর দিয়ে চলে গেল ।
আমরা বেরিয়ে এলাম । রাস্তায় মানুষের ঢল ।
জানতে পারলাম, ভারতীয় যুদ্ধ বিমান মুক্তিযোদ্ধা পাইলটদের সহযোগিতায় এয়ারপোর্টে আক্রমণ চালিয়েছে ।

আরো জানলাম বেশ ক’জন পাকিস্তানী দোসর আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে এবং তাদের সবাইকে সদর হাসপাতালে আনা হয়েছে ।

আমরা সবাই হাসপাতালে গিয়ে একজনকে মৃত দেখলাম, সবাই বলছিল নাম মইদুর বাড়ী চকরিয়া ।

আরো লোকজনের মুখে শুনতে লাগলাম, পাকিস্তান হানাদারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন , মইদুর ও আরো ক’জন দোসর এয়ারপোর্টের দোতলায় নাচের জলসা বসিয়েছিল, নর্তকী’র নাম বলল – কল্পনা । যখন নাচগানে মশগুল ঠিক ঐ মুহুর্তে বোমারু বিমানের আক্রমণ ।

সেই দিনগুলি, শুধু কক্সবাজার এয়ারপোর্টের দোতলায় জলসার আসর স্টাডি করলে সহজেই বুঝতে পারবেন মুখে ইসলামের লেবাজ নিয়ে কেন হল পাকিস্তানের পতন । ইসলামের ছিটেফোঁটা তখন তাদের মাঝে তাদের দোসরদের মাঝে যে ছিল তা বলার কোন অবকাশ নাই ।

এখনো যারা পাকিস্তানীদের প্রতি প্রীত , পাকিস্তানের সেই সময়কে ভালবাসে তাদের বলছি সেই সময়গুলি জানতে চেষ্টা করুন ভুল ভাঙ্গবেই ।