ইমরান হোসাইন, পেকুয়া:

কক্সবাজারের পেকুয়ায় সংরক্ষিত বনভ‚মির বালু নির্বিঘেœ পরিবহন করতে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়ক ও দুটি কালভার্ট নির্মাণ করেছে প্রভাবশালী একটি চক্র। বনের ভেতর নির্মাণ করা এ সড়ক দিয়ে সংরক্ষিত বনভ‚মির মূল্যবান উপাদান ‘বালু’ পাচারের মহাযজ্ঞ চললেও এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বনবিভাগ বা স্থানীয় প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জের আওতাধীন টৈটং বনবিটের বনকানন এলাকা থেকে মধুখালী ও সংগ্রামের ঝুম এলাকা পর্যন্ত পাহাড়ের মাটি দিয়ে স¤প্রতি নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি আলাদা কাঁচা সড়ক। সড়কটি ভারী যান চলাচল উপযোগী করতে মধুখালী মোস্তাক সওদাগরের দোকানের পশ্চিম পাশে ও মধুখালী জামে মসজিদের পাশে পাহাড়ি ছড়ার উপর প্রায় ছয় লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দু’টি কালভার্ট (পাকা সেতু)। তাছাড়া সড়কটি নির্মাণ করতে কাটা হয়েছে অন্তত দশটি পাহাড় ও ঘন জঙ্গল। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে ও পাহাড়ি ছড়া থেকে অবৈধভাবে তুলে আনা বালু এ সড়ক দিয়ে পেকুয়া ও বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়।

 

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুধুমাত্র বালু পরিবহন করতে একমাস আগে এ সড়ক ও কালভার্ট দুটি নির্মাণ করেন স্থানীয় প্রভাবশালী জাকের হোসেনের নেতৃত্বাধীন ১০-১২ জনের একটি বালু দস্যু সিÐিকেট। মধুখালী এলাকার চারটি ও সংগ্রামের ঝুম এলাকার ছয়টি পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে বালুভর্তি শতাধিক ট্রাক চলাচল করে।

 

পেকুয়া উপজেলা পরিবেশবাদী সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফারুক বলেন, বালু দস্যুতার জন্য সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড়-জঙ্গল কেটে যারা সড়ক বানিয়েছে, তাঁরা চরম দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। বনের এতো ভেতরে মানুষের যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় হারবাং টৈটং বেল্টের হাতির অভয়াশ্রমসহ জীববৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মানুষের আনাগোনা বৃদ্ধি, বালুর উত্তোলনের মেশিন ও গাড়ীর শব্দের কারণে অরণ্যে ঘেরা এসব এলাকায় মেছোবাঘ, শুকুর, শেয়াল ও হরিণসহ নানা বন্যপ্রাণীর বিচরণ এখন বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিনই এসব এলাকায় বন্য হাতির দল নেমে আসছে। প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা করতে চাইলে এখনই এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।

 

বনের ভেতর সড়ক ও কালভার্ট নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাকের হোসেন বলেন, বনকানন, মধুখালী ও সংগ্রামের ঝুম এসব এলাকা সংরক্ষিত বনভ‚মি হলেও এখানে হাজার চারেক মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের যাতায়াতের সুবিধার্থে আমি নিজের অর্থ ব্যয় করে সড়ক সংস্কার ও কালভার্ট স্থাপন করেছি। এব্যাপারে টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর কাছ থেকে আমি মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়েছি। আর সড়ক হলে তো গাড়ী চলবেই। শুধুমাত্র বালু পরিবহনের জন্য সড়ক সংস্কারের অভিযোগটি সত্য নয়।

 

অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (বহিষ্কৃত) জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কাউকে আমি বনের ভেতর রাস্তা নির্মাণের অনুমতি দিতে পারিনা। এটি বনবিভাগের সম্পত্তি। অনুমতি দিলে বনবিভাগ দেবে। জাকের হোসেনের দাবীটি সম্প‚র্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

 

এব্যাপারে টৈটং বনবিট কর্মকর্তা জাবেদ উল আব্বাস বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে সংরক্ষিত বনের পাঁচ কিলোমিটার ভিতরে গিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে বালু তুলছে এবং তা পরিবহনের জন্য সড়ক নির্মাণ করেছে। বিষয়টি নজরে আসার পর থেকে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তার নেতৃত্বে আমরা বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। বহুবার বালু উত্তোলনের মেশিন নষ্ট করেছি, সড়কে গাছ পুতে দিয়েছি৷ কিন্তু আমরা চলে আসার পর তাঁরা আবার বালু উত্তোলন ও পরিবহন শুরু করে।

 

বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল গফুর মোল্লা বলেন, আমাদের জনবল সীমিত। কিন্তু অপরাধীরা সঙ্ঘবদ্ধ। তারপরও সীমিত জনবল নিয়ে আমরা তাদের প্রতিহতের চেষ্টা করছি।

 

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোতাছেম বিল্লাহ বলেন, বনবিভাগ চাইলে বালু দস্যুতা বন্ধ ও পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে সহযোগিতা করবে উপজেলা প্রশাসন।