সিবিএন ডেস্ক:

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশ রক্ষার জন্য দেশের নদ-নদী রক্ষা অপরিহার্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও নদীমাতৃক বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের দেহের শিরা-উপশিরা নষ্ট হলে যেমন মৃত্যু অনিবার্য, ঠিক একইভাবে আমাদের নদীগুলোকে দখল-দূষণ থেকে রক্ষা করতে না পারলে দেশকে রক্ষা করা কঠিন। দেশের জলবায়ু এবং এই নদীপাড়ের মানুষগুলোকে রক্ষা করা কঠিন। সেজন্য আমাদের সবাইকে নদী রক্ষায় আত্মনিয়োগ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের নদীগুলোর শতকরা ৯৩ ভাগের উৎস বাংলাদেশের বাইরে। এই নদীগুলো আমাদের দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ার পথে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন টন পলি বহন করে। এরমধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ মিলিয়ন টন নদী পথে জমা হয়। এইভাবেই গত ৪ বছরে সমুদ্রে বেশ কয়েকটি দ্বীপচর জেগেছে। সুবর্ণচর কিন্তু ৫০ বছর আগে ছিল না, উপজেলাটি ছিল। এরকম আরও অনেক ছোট ছোট দ্বীপ জেগে উঠেছে। যেখানে আজকে রোহিঙ্গাদের সাময়িক স্থানান্তরের কথা বলা হচ্ছে, সেই চরটিও ৫০ বছর আগে ছিল না । এই যে সম্ভাবনা সমুদ্রে তৈরি হচ্ছে, তা কাজে লাগানোর জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়া সম্ভব।’

প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বের দেশগুলোর দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি যদি শতভাগ বাস্তবায়িত হয়, তারপরও পৃথিবীর তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি বাড়বে উল্লেখ করে পরিবেশের গবেষক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি তিন ডিগ্রি বাড়ে, তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। এই বাস্তবতায় নদীগুলোকে কীভাবে বাঁচানো যায়, সেজন্য আগামী ১০০ বছরের ভাবনা মাথায় রেখেই আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে হবে। কোথায় মানুষকে থাকতে দেবো, কোথায় ফসল উৎপাদন করবো, কোথায় রবি শস্য উৎপাদন হবে—এসব বিষয়ে সারাদেশে একটা ফিজিক্যাল প্ল্যান দরকার।’

নদী রক্ষায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অব্যাহত চেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদের নেতৃত্বে নদী দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে তার মন্ত্রণালয় সত্যিকারের কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এই ব্যবস্থাকে টেকসই করতে বেপরোয়া দখলকারীদের রুখতে নদী রক্ষা কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা দরকার, প্রয়োজন শক্তিশালী টাস্কফোর্স।’

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ড. হাছান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সব দিকনির্দেশনা তিনি রচনা করে গেছেন। আইন প্রণয়ন করে গেছেন, যেটির ওপর দাঁড়িয়ে আমরা হাঁটছি। তখন যদি বাংলাদেশ জাতিসংঘের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য না হতো, সমুদ্রসীমার জন্য আমরা মামলাও করতে পারতাম না। মামলা করার কোনও সুযোগ থাকতো না। ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তি না থাকলে ছিটমহলগুলো অধিকারে আনাও আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। আজকে যে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে, তার ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র তিনিই রচনা করে গেছেন। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু সবকিছুর ভিতই রচনা করে গেছেন। আর সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আজকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য দেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া। আর সেই স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে হলে নদ-নদীগুলোকে রক্ষা করতে হবে।’

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তার বক্তৃতায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমরা আজ নদীমাতৃকতার সুফল ভোগ করতে পারতাম। কিন্তু আজ আমাদের নদী রক্ষার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজ আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি।’

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির উপাচার্য রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ খালেদ ইকবাল। প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ সাইফুল আলম, বুয়েটের পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান এবং লেখক, গবেষক ও সংগঠক শেখ রোকন। নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর এ জেড এম জালাল উদ্দিন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।