বিদেশ ডেস্ক:
কয়েকদিন আগে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় সম্মতি দিলেও পরাজয় মেনে নেওয়ার ব্যাপারে নিজের অবস্থান অস্পষ্টই রেখেছিলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচিত প্রার্থী জো বাইডেনকে ইলেকটোরাল ভোটে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী ঘোষণা করা হলে পরাজয় মেনে হোয়াইট হাউস ছাড়তে রাজি তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

কয়েক সপ্তাহের অনিশ্চয়তা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিনকয়েক আগে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরুতে সম্মতিও দিয়েছেন। ফলে বাইডেন এখন নিয়মিতই গোয়েন্দা ব্রিফিং পাচ্ছেন। বাইডেন শিবির গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা এবং ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য লাখ লাখ ডলার খরচেরও সুযোগ পাচ্ছে। এরইমধ্যে পরাজয় মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত আরও খানিকটা স্পষ্ট করলেন ট্রাম্প।

বৃহস্পতিবার ‘থ্যাংক গিভিং ডে’ উপলক্ষে দেওয়া ব্রিফিংএ ট্রাম্পকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেন, ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে হারলে তিনি হোয়াইট হাউজ ছেড়ে দেবেন কি না। এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘অবশ্যই আমি ছাড়ব, অবশ্যই ছাড়ব এবং আপনারা তা জানেন।’ তবে এজন্য তিনি নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন নিশ্চিত হলেই হোয়াইট হাউজ ছেড়ে দেবেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এমন মন্তব্য করার সময় ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেনকে বেছে নিলে ইলেকটররা ‘ভুল করবে’। সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘হার মেনে নেওয়া সত্যিই খুব কঠিন হবে, কেননা আমরা জানি সেখানে (নির্বাচন) বড় ধরনের জালিয়াতি হয়েছে।’ অবশ্য এদিনও ট্রাম্প তার এ অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি। ক্ষমতা হারানোর পর নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে থাকবেন কি না, সে প্রসঙ্গেও কিছু বলেননি তিনি।

চলতি মাসের ৩ তারিখে হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গণনাকৃত ভোটের ধারা অনুযায়ী রিপাবলিকান এ প্রার্থী তার প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে সুস্পষ্ট ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে। বিভিন্ন রাজ্যের ভোটের ফল অনুযায়ী বাইডেনকে ট্রাম্পের তুলনায় ইলেকটোরাল ভোটে ৩০৬-২৩২ ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট ঠিক হয় না, হয় রাজ্যগুলোর জন্য আনুপাতিক হারে বরাদ্দ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পদ্ধতিতে। নির্বাচিত হতে হলে মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ন্যূনতম ২৭০টি পেতে হয়।

পপুলার ভোটেও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন রিপাবলিকান ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী তার প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় ৬০ লাখেরও বেশি ভোট পেয়েছেন বলে গণনায় দেখা গেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, আগামী মাসে ইলেকটররা একত্রিত হয়ে ভোটের আনুষ্ঠানিকতা সারবেন। সব ঠিক থাকলে ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনেরই শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে বাইডেনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মতি জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সংস্থার ‘যা করার প্রয়োজন করুক’। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচনে পরাজয়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ) বলছে, তারা বাইডেনকে ‘আপাত বিজয়ী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই কোনোভাবেই এ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোনো সংশয় থাকার কথা নয়।