নিজস্ব প্রতিবেদক :
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ২৫ নভেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ শুরু হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও ১৬ দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। তারমধ্যে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ‘ইউএন উইমেন’ এর উদ্যোগে ৫টি কর্মসূচী পালন করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল ৫ নং ক্যাম্পে নারী মেলা, ১০, ১৭ ও ২০ নং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা পুরুষ—ছেলেদের অংশগ্রহণে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা, নারীর প্রতি সহিংসতা এবং বাল্য বিবাহ রোধে রোহিঙ্গা পুরুষদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ আলোচনা সভা, কুইজ প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা, ২টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নারীদের সাথে সিআইসি’র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমন ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন চলবে।
বুধবার সকালে ৫ নং ক্যাম্পে ফিতা কেটে নারীদের অংশগ্রহণে হস্তশিল্প মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ক্যাম্প ইনচার্জ শেখ হাফিজুল ইসলাম এবং ৩ ও ৪ নং ক্যাম্পেইনচার্জ মাহফুজার রহমান। এরপর উনারা মেলা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে উনারা রোহিঙ্গাদের তৈরিকৃত বিভিন্ন পণ্য দেখে অভিভূত হন। নান্দনিক এই আয়োজনের জন্য উনারা ইউএন উইমেন এর ভূয়সী প্রসংশা করেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাফিজুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা নারীদের মাঝেও সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। ইউএন উইমেনসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে রোহিঙ্গা মহিলারা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে। এসব উদ্যোগে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সংস্থাগুলোকে সব রকম সহযোগিতা দেয়া হবে।
এরপর ক্যাম্প—১৭ তে রোহিঙ্গা মহিলাদের নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা ও নারীদের সাথে সিআইসিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাম্প—৫ এর ইনচার্জ শেখ হাফিজুল ইসলাম। মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নারীরা মিয়ানমারে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসে। এখানে এসেও কোভিড—১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েশিশুর প্রতি নানা ধরনের সহিংসতা, বিশেষ করে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে। এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। কোভিড সংকটের মধ্যেও সহিংসতার এই ছায়ামহামারি বেড়ে চলেছে। তিনি বলেন এমন অনেক কেস আমাদের হাতে এসেছে। এই সহিংসতাকে বন্ধ করতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সচেতনতামূলক বিভিন্ন উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
দুপুরে ১০, ও ২০ নং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা পুরুষ—ছেলেদের অংশগ্রহণে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা এবং বাল্য বিবাহ রোধে রোহিঙ্গা পুরুষদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাম্প ৩ ও ৪ এর ইনচার্জ মো. মাহফুজার রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, নারীদের প্রতি নির্যাতন ও বাল্য বিয়ে রোধে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। এ জন্য নিতে হবে নানা কর্মসূচী। এসব কর্মসূচীর মাধ্যমে তারা সচেতন হয়ে সমাজের অন্যান্যদের বুঝাবে। এতে করে ধীরে ধীরে নির্যাতন ও বাল্য বিয়ের মাত্রা কমে আসবে।
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ‘ইউএন ইউমেন, এর ১৬ দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন নিয়ে ‘ইউএন উইমেন’ এর প্রতিনিধি মেরি সোফি পিটারস্যান বলেন, নারীর অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে আইন থাকার পরও সহিংসতা বাড়ছে ঘটনার দ্রুত দৃশ্যমান বিচার না হওয়ায়। এর জন্য পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে, প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুললে অবস্থার পরিবর্তন হবে শিগগিরই। বিশেষ করে রোহিঙ্গা নারীদের আত্মমর্যাদা ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে হবে। জেন্ডার বান্ধব সমাজ গড়তে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।