অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন


মাতঙ্গিনী হাজরা বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রাণ দিয়েছেন।১৭৫৭ সালে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ভারতবর্ষ দখল করে শোষণ-লুন্ঠন, অত্যাচার নিপীড়ন চালিয়েছে। সেই ভারতবর্ষে ১৮৭০ সালের ১৯ অক্টোবর মাতঙ্গিনী হাজেরা কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।ভারতের পশ্চাদপদ সমাজ ব্যবস্থায় মাতঙ্গিনীর বাবা তাকে অল্প বয়সেই বিয়ে দেন। তিনি ১৮ বছর বয়সেই বিধবা হন। হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী সারা জীবন তিনি বিধবা হিসেবেই কাটিয়ে দেন।কিন্তু মাতঙ্গিনী তার জীবনকে স্বার্থক করে তোলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে।তিনি ৩ বার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। প্রথমবার লবণ তৈরি আইন অমান্য করে গ্রেফতার হন। দ্বিতীয়বার কালো পতাকা পুলিশকে দেখানোর জন্য এবং তৃতীয়বার চৌকিদারী ট্যাক্স বন্ধ করার আন্দোলনের কারণে।১৯৪০ সালে বৃটিশ আইন অমান্য করে যে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয় সেই বিদ্রোহে তিনি নেতৃত্বের সারিতে ছিলেন। বিদ্রোহীরা ভারতের মেদিনীপুরে টেলিগ্রাফের তার উপড়ে ফেলেন, বৃটিশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বোমা-হামলা করেন এবং বৃটিশ পতাকা পুড়িয়ে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে সশস্ত্র বিদ্রোহের সময় পুলিশের গুলিতে ১৮০ জন বিদ্রোহী শহীদ হন। ১৬৩০ জন আহত হন এবং গ্রেফতার হন ৬০ হাজার। ১৯৪২-এর সেপ্টেম্বরে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে ৫০ হাজার নারী-পুরুষের এক বাহিনী তমলুক থানার লালবাড়ী দখল করতে যান। সেখানে তিনি সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন। এই আন্দোলনে বহু নেতা-কর্মী আহত-নিহত হন। মাতঙ্গিনীও ৩টি গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি ৭৩ বছর বয়সে শহীদের মৃত্যু বরণ করেন।
মাতঙ্গিনী হাজরা কোনো বিপ্লবী দিশায় দিক্ষিত ছিলেন না। বা সমাজের সার্বিক মুক্তিকামী কোনো সংগঠনের কর্মীও ছিলেন না। তিনি ছিলেন মূলত বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী একজন নির্ভীক সৈনিক। মাতঙ্গিনী ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস নেতা গান্ধীর অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও অহিংস নীতির বদলে যেখানেই সহিংস আন্দোলন শুরু হয়েছে- সেখানেই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এবং জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছেন; শেষ পর্যন্ত জীবন বির্সজন দিয়েছেন। এটাই তার অগ্রসরতা।
এ্ আওয়ামী লীগ যখন বিপদে পড়েছিলো , বিশেষকরে ছয় দফা দেওয়ার পরে, আওয়ামী লীগের সমস্থ নেতারা যখন জেলে ছিলেন , তখন এক ভদ্র মহিলা আওয়ামী লীগকে মায়ের আদর দিয়ে সারা বাংলাদেশে ঘুরে ঘুরে আওয়ামী লীগের কর্মীদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, উজ্জিবিত করেছিল তাঁর নাম ছিল আমেনা বেগম সেই আমেনা বেগম পর্যন্ত আওয়ামী লীগ করতে পারেননি। হয়তো তাঁর নাম কোন বিরাঙ্গার খাতায় উঠবেনা। আমাদের দেশের আমেনা বেগম ও ভারতের নিপীড়িত নারীদের সংগ্রামে মাতঙ্গিনীর জীবন উৎসর্গ প্রেরণা যোগাবে নিঃসন্দেহে। একই সাথে এই শিক্ষা নিতে হবে মাতঙ্গিনী সহ হাজার-হাজার নারী পুরুষের রক্তের বিনিময়ে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ উচ্ছেদ হলেও ভারতবর্ষের শ্রমিক, কৃষক এবং নিপীড়িত নারীরা সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদ-পুরুষতন্ত্রের শোষণ-নিপীড়ন থেকে মুক্তি পায়নি। এখনো নির্ভয়াদের ধর্ষণের শিকার হয়ে জীবন দিতে হচ্ছে। নারী ধর্ষণকারী শহর হিসেবে নয়াদিল্লি ২য় স্থানে।বাংলাদেশেও ধর্ষিতা মহিলার সংখা কম নয়। এখনো আমাদের নারী সমাজ বৃটিশ দখলদারিত্বের যুগ থেকে একটুও আগায়নি। আগানো সম্ভবও নয়। ভারতে এখনো পালা বদল করে ক্ষমতা চালাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদেরই দালাল শাসকশ্রেণি। এই দালাল শাসকশ্রেণি উচ্ছেদ ব্যতীত নারীদের মুক্তি অসম্ভব। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে আমাদের এবং ভারতের বিপ্লবী নারী সংগঠন। তার অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিপীড়িত নারীগণ।