সিবিএন ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত হয়ে থাকবেন তার ব্যক্তিগত আচরণ ও উপর্যুপরি মিথ্যা বলার জন্য। রিপাবলিকান এই নেতা যতটা না রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের নিকট হারতে যাচ্ছেন তার চেয়েও বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে তার ব্যক্তিগত ত্রুটি।

একদিকে তার করা মামলাগুলো একের পর এক খারিজ করে দিচ্ছেন আদালত, অন্যদিকে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে এগিয়ে যাচ্ছেন বাইডেন। সব মিলিয়ে তিনি যেন পালিয়ে বাঁচারও সুযোগ পাচ্ছেন না- বিভিন্ন গণমাধ্যমে এভাবেই শিরোনাম করা হচ্ছে।

নিউইর্য়ক সিটি কলেজের ছাত্রী দ্বীমাত্রী এ্যাথিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুতে এ নিয়ে ট্রাম্পের ব্যাপক গাফিলতি তার পরাজয়ের বড় কারণ। মহামারি করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব না দেয়া, মাস্ক পরিধানে অনীহা। নিজে করোনা আক্রান্ত হওয়া নিয়ে নাটক। করোনা সংক্রান্ত অজস্র ভুল পরামর্শ। যার কারণে অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন।’

‘মৃতের পরিবার কখনও ট্রাম্পকে ক্ষমা করতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তিরিক্ষি মেজাজ, দুর্ব্যবহার, অশোভন অঙ্গভঙ্গি অনেক ভোটারদের মনে নেতিবাচক দাগ কেটেছে। সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী মনোভাব। মানুষকে অবমূল্যায়ন করাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এই নির্বাচনে।’

সাংবাদিক ও গীতিকার দর্পণ কবীর বলেন, ‘অভিবাসী নীতি আরো কঠোর করার অঙ্গীকার করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পৃথিবীব্যাপী যে রাষ্ট্রের পরিচয় অভিবাসী দেশ হিসেবে সেখানে তাদের আগমন নানাভাবে রুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। জনতা এখন রাজনীতিতে তার পথ অবরুদ্ধ করে দিচ্ছে।’

তিনি অভিবাসীদের বিদায় করতে চেয়েছিলেন এখন জনগণ তাকে ক্ষমতা থেকে চিরো বিদায় করে দিচ্ছে। অধিকাংশ মার্কিন মিডিয়ার বিরুদ্ধে ‘ভুয়া নিউজ‘আখ্যা দিয়ে ঢালাও অভিযোগ করতেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফলে মিডিয়াও তাকে স্বস্তি দেয়নি।

স্কুল শিক্ষিকা সরকার বন্যা বলেন, ‘রাষ্ট্রকে তিনি কখনো সঠিক আয়কর প্রদান করেননি। মিথ্যা বলেছেন হাসিমুখে এমন একজন অনৈতিক মানুষকে প্রত্যাখ্যান করারই কথা। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা ৫ শতাধিক শিশু নিখোঁজ রয়েছে ট্রাম্পের ম্যাক্সিকোবিরোধী মনোভাবের কারণে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতির কারণে বিভিন্ন শহর বা অঙ্গরাজ্যে পুলিশের মধ্যে দাম্ভিক ও নির্দয় আচরণ বেড়ে গেছিল বলে ডেমোক্র্যাট শিবির প্রচারণা করেছিল ভোটযুদ্ধে।’

ছয়মাস পায়ে হেঁটে আমেরিকায় প্রবেশ করে সম্প্রতি গ্রিনকার্ড পাওয়া রায়হান তালুকদার বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনুপ্রবেশকারীদের সীমান্ত সংলগ্ন দেশেই ‘অ্যাসাইলাম’ করার (রাজনৈতিক আশ্রয়) সিস্টেম চালু করেন। আমাদের মতো যারা জীবন বাজি রেখে এই দেশে আশ্রয় গ্রহণের জন্য আসে তাদের জন্য বিষয়টি যে কেমন মর্মান্তিক তা বলে বোঝানো যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘পারিবারিক ভিসা বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা করছিলেন তিনি। কিছু নির্দিষ্ট দেশকে নিষিদ্ধ করতে চেয়েছেন তিনি। এমন অমানবিক নীতিগুলো মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছে।’

রেস্টুরেন্টে কাজ করা হেতায়েদ আলী বলেন, ‘নতুন রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা (মেডিকেড) বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওবামা কেয়ার বন্ধ করেছেন। আমাদের মতো অল্প আয়ের মানুষের জন্য এদেশে সরকারি চিকিৎসা যে কতটা উপকারি তা ভুক্তভোগীরাই জানেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের জোরালো সমর্থন অটুট ছিল। শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের এলাকা বা অঙ্গরাজ্যগুলোতে তার পক্ষেই ভোট পড়েছে। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের মধ্যে মিশিগান, নেভাদা, উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুবিধা করতে পারেননি।

এখানে বাইডেন সমর্থন পেয়ে যান ভোটারদের। আমেরিকার মানুষের অনেক আশা এখন সম্ভাব্য প্রিসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে। দেখা যাক তিনি কী করে খুশি রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে। বিশ্ববাসীরও চোখ এখন বাইডেনের দিকে।