মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া:
ভারী পরিবহনে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা চকরিয়া-লামা উপজেলার সংযোগ সড়ক। থমকে যেতে পারে দুই উপজেলার লক্ষাধিক জনজীবন। চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট হয়ে পার্বত্য লামা উপজেলায় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম মালুমঘাট-গুলিস্থান বাজার সড়ক। সম্প্রতি সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিনত হলেও তদারকি মিলছে না কারোই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট, ডুমখালী, মিঠাছড়ি, উলুবনিয়া এলাকায় রয়েছে সাগরের ফিশিং বোট তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ কাঠ আসছে ডুলাহাজারা-বগাইছড়ি, ডুলাহাজারা-সাপের গাড়া ও মালুমঘাট-গুলিস্তান বাজার সড়ক দিয়ে। পাশাপাশি দুই উপজেলার বাজার সমূহে বা তৎসংলগ্ন এলাকায় রয়েছে কয়েক ডজন অবৈধ করাতকল। যেখানে দিবারাত্রি বনাঞ্চলের কোটি কোটি টাকার কাঠ চিরাই চলছে। সরাসরি বনাঞ্চল থেকে নতুবা করাতকল থেকে মহা মুল্যবান কাঠ ভারী পরিবহন যোগে যাচ্ছে বোট কারখানায়। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে বিশাল অংকের রাজস্ব এবং অপরদিকে জন চলাচল সড়কগুলো জীবনযৌবন হারিয়ে পরিনত হচ্ছে ধ্বংসাবশেষে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, মালুমঘাট-গুলিস্থান বাজার সড়ক দিয়ে অব্যাহত রয়েছে চোরাই কাঠ পাচার। অভিযোগ রয়েছে, এই পাচার কাজে জড়িত থেকে নিরাপত্তা দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট ডুলাহাজারা বন বিটের অসাধু লোকজন। এ সড়ক দিয়ে কাঠ পাচারের ভারি পরিবহনের ফলে সড়কের অবস্থা দিনদিন অবনতি হচ্ছে। মালুমঘাট বাজারের দুই কিলোমিটার পূর্বে চা-বাগান সাতঘটিয়া পাড়া সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে একটি কালভার্ট এবং তার-ও অদূরে মৌলভিকাটা নামক এলাকায় রয়েছে অপর কালভার্ট। বর্তমানে এ কালভার্টের গোড়া থেকে মাটি সরে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
অপরদিকে চা-বাগানের পর থেকে মৌলবীকাটা কালভার্ট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের বেশকিছু অংশের ইট উপড়ে গেছে। আবার কিছু অংশের ইট ভেঙে গিয়ে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড়বড় গর্ত। ফলে চা-বাগান থেকে হায়দারনাসী পর্যন্ত খানাখন্দে সড়কের ভয়াবহ অবস্থা পরিনত হয়েছে। এছাড়া দিনের পর দিন কালভার্টের গোড়া থেকে মাটি অপসারণ হয়ে যে কোন সময় লামা ও চকরিয়া উপজেলার লাখো জনগণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের আশঙ্কা রয়েছে।
অপরদিকে এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে অটোরিকশা ও সিএনজি। মালুমঘাট বাজার এবং গুলিস্তান বাজারে এসব ছোট যানবাহনের রয়েছে কয়েকটি সমিতি সংগঠন। কিন্তু সমিতির নেতৃত্ব দাতাদের সড়ক সংস্কারে কোনপ্রকার মাথাব্যথা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অথচ এ ছোট যানের ফলে বর্নিত এলাকায় ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। এতে অসংখ্য আহত এমনকি নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার সংযোগস্থলে সড়কটির অবস্থান হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব মিলছে এমনটাই ধারণা স্থানীয়দের। চকরিয়া ও লামা উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক জনগণের দাবী- ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওতাধীন মালুমঘাটের চা-বাগান থেকে হায়দারনাসী এলাকা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে অতিসত্বর জনদুর্ভোগ লাঘব করা হউক!
এ ব্যাপারে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের চা-বাগান এলাকার মেম্বার শওকত আলী জানান, সড়কটি অত্যন্ত জনবহুল। এ সমস্যা নিরসনের চেষ্টা চলছে। অতিসত্বর মাটি ভরাটের মাধ্যমে আপাততঃ ঝুঁকি এড়ানোর চেষ্টা করা হবে। ভারি পরিবহন চলাচল বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকের হোসাইন মজুমদার বলেন, পার্বত্য এলাকার সাথে যোগাযোগে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সড়কের সমস্যাটি আমরা শীগ্রই যাচাই হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।