অনলাইন ডেস্ক : স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশার মাইজভান্ডারীর সার্বিক তত্বাবধানে অনুষ্ঠিত নাজিরহাট বড় মাদরাসার মজলিসে শুরার সিদ্ধান্তক্রমে অবশেষে নাজিরহাট বড় মাদরাসা বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছেন মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা।

দীর্ঘদিনের বিরোধের অবসান ঘটিয়ে মজলিসে শুরার বৈঠকের মাধ্যমে মাদরাসাটির মুহতামিম নির্ধারণ করা হয়েছে মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমীকে এবং মাদরাসার সাবেক মুহতামিম দাবিদার ও আল্লামা শফী রহ. এর সময়ে বিতর্কিতভাবে নির্ধারণ করা মুহতামিম মাওলানা সলিমুল্লাহ ও তার সমর্থকসহ সর্বমোট ১৩ জনকে মাদরাসা থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়েছে।

এছাড়াও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মাদরাসার মুতাওয়াল্লি নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

আজ ২৮ অক্টোবর সকাল ১০ টা থেকে প্রশাসনিক কড়া নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত হওয়া শুরা বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে মাদরাসার সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র।

সূত্র থেকে জানা গেছে – প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ, র‍্যাব ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা।

শুরা বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সায়েদুল আরেফিন, উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা, নাজিরহাট থানার ওসি বাবুল আকতার সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তবে সার্বিক সকল কিছুই তদারকি করছেন স্থানীয় সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তিনি ঘোষণা দিয়েই আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সমর্থনের কারণে মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমীর পক্ষে ছিলেন। যদিও তিনি এর আগে মাওলানা সলিমুল্লাহর পক্ষে ছিলেন। নিজের অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি জানিয়েছিলেন – “সরকার আমাকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর পক্ষে থাকতে বলেছেন বলেই নাজিরহাট মাদরাসা ইস্যুতে আমি জুনায়েদ বাবুনগরী ও মহিববুল্লাহ বাবুনগরীর পক্ষে আছি।”

নাজিরহাট মাদরাসার শুরা কমিটির পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন – আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী, মাওলানা নোমান ফয়জী, আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারী, মুফতী হাবিবুর রহমান কাছেমী, মুফতী মাহমুদুল হাসান।, মাওলানা হাফেজ কাসেম।, মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা উমর ফারুক।, মুফতী আরশাদ রহমানী, মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা খুবাইব, জিরি মাদরাসা।

সকাল ১০ টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মজলিশে শুরার মিটিং থেকে আরও যেসব সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে তা হলো –

মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমীকে মাদ্রাসার মহাপরিচালক নিযুক্তের পাশাপাশি মাওলানা ইয়াহিয়া বিন আবু তাহেরকে সহকারী পরিচালক ও মাওলানা ইসমাইল বিন শামসুদ্দিনকে সহযোগী পরিচালক নির্বাচিত করা হয়েছে।
মাদ্রসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা হাবিবুল্লাহ নদভীকে শিক্ষা পরিচালক এবং ইফতার জিম্মাদার মাওলানা রবিউল হাসান কে সহকারী শিক্ষা পরিচালক নিযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও মদরাসার প্রবীণ শিক্ষক ও মুহতামিম দাবিদার মাওলানা সলিমুল্লাহ সহ মোট ১৩ জনকে সর্ব সম্মত ভাবে স্থায়ী ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে।
বহিস্কৃতরা হলেন – মাওলানা সলিমুল্লাহ, মুফতি হাশেম, মাওলানা সালাহ উদ্দীন, মাওলানা নূরুল আলম নছিরী, মাওলানা মিজান, মাওলানা মাহফুজ, হাফেজ আব্দুল কাদের, মাওলানা মামুনসহ মোট ১৩ জন।

তবে তাদের মধ্যে কাকে কোন দোষে এবং কোন কারণে বহিস্কার করা হয়েছে তা বিস্তারিতভাবে জানা যায়নি। তবে দীর্ঘদিন ধরে মাওলানা সলিমুল্লাহ মাদরাসায় দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া তার ব্যাপারে অর্থনৈতিক অনিয়মসহ বেশ কিছু অভিযোগও রয়েছে।

অপরদিকে শুরা বৈঠক নিয়ে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ও কঠোরতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিলো। নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার শূরা কমিটির বৈঠককে কেন্দ্র করে সবধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় নাজিরহাট বাজারের সব ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আজ বুধবার সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিষয়টি মঙ্গলবার বিকালে সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মঙ্গলবার রাত থেকে নাজিরহাট এলাকায় বিপুল সংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে নাজিরহাট বাজারের ১ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সবধরণের যানচলাচল ও জনচলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

প্রসঙ্গত : নাজিরহাট বড় মাদরাসা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই একটি বিরোধ চলে আসছিলো। গত ২৭ মে মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ মুহাম্মদ ইদ্রিস ইন্তেকাল করলে মাদরাসার মুহতামিম পদ নিয়ে মাওলানা সলিমুল্লাহ ও মুফতী হাবিবুর রহমানের মধ্যে দ্বন্ধও দৃশ্যমান হয় দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি বিষয়টি মামলা ও আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। যে দ্বন্ধে আল্লামা শফীপুত্র আনাস মাদানী মাওলানা সলিমুল্লাহর পক্ষ নিয়েছিলেন এবং আল্লামা শফী রহ. এর স্বাক্ষর নিয়ে মজলিসে শুরার সিদ্ধান্ত দিয়ে তাকে মুহতামিম ঘোষণা করেছিলেন যদিও সেই সিদ্ধান্ত মুফতী হাবিবুর রহমান কাসেমী অংশের লোকজন মানেনি। পরবর্তিতে আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মুফতী হাবিবুর রহমানের পক্ষে দাড়ান এবং তাকে সমর্থন দেন। শেষ পর্যন্ত আজকের শুরা মিটিংয়ে তিনি মুহতামিম নির্ধারণ হন এবং সলিমুল্লাহ বহিস্কৃত হন।
সুত্র : পাবলিকভয়েস