জাহাঙ্গীর আলম শামসঃ
প্যারালাইসিস আক্রান্ত দরিদ্র রিক্সাচালক নুরুল আমিনের মেয়ে রাবেয়া আকতারের বিয়েতে আসবাবপত্র (ফার্নিচার) উপহার দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সেভ দ্যা হিউমিনিটি কক্সবাজার।

শনিবারের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের নির্বাহী সদস্য সমাজসেবক মোঃ সালাহ উদ্দিন।

চাকমারকুল ইউনিয়নের আলী হোসেন সিকদারপাড়ায় ভাঙ্গা এক কুঠিরে স্বপরিবারে বসবাস নুরুল আমিনের।

তিনি ছাড়া পরিবারে উপার্জনের আর কেউ নেই। ওই এলাকার চারপাশে শুধু দরিদ্র মানুষের হাহাকার আর হাহাকার। বেশিরভাগ মানুষই দিনমজুর, রিক্সাচালক, কাঠমিস্ত্রী, রাজমিস্ত্রী, ভেনচালক।

খুবই দুরুহ জীবন অতিবাহিত করছেন রিক্সাচালক নুরুল আমিনের মতো হতদরিদ্র অসংখ্য নুরুল আমিন। যান্ত্রিক এই সভ্যতায় কে রাখে কার খবর!!

কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ কালজয়ী উপন্যাসে প্রকৃতির প্রতিকূলতা, দারিদ্রের নির্মম কশাঘাতে দরিদ্র মানুষের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক বলেছেন ‘ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে, ভদ্র পল্লীতে- এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’

দুই বছর আগে নুরুল আমিনের উপর নেমে আসে প্রকৃতির আরেক অভিশাপ। প্যারালাইসিস আক্রান্ত হয়ে সে পুরো পরিবারকে বিধাতা যেন স্থবির করে দিয়েছেন। ছোট্ট ভাঙ্গা কুঠিরে এভাবেই চলতে থাকে তাদের কঠিন দুর্দিন! ক্ষুধা, দারিদ্র্য সবমিলিয়ে রিক্সাচালক দুস্থ নুরুল আমিনের একেকটা দিন যেন একেকটা বছরের মতো অতিবাহিত করছেন।

এমন কঠিন দুঃসময়ে তার উপযুক্ত বালিকা আদরের কন্যা রাবেয়া আকতারের বিয়ের সম্মন্ধ পাকাপোক্ত হয়। বেচারা চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখতে থাকেন। দারিদ্রতা প্রত্যেক মানুষের স্মৃতিশক্তি ও মানসিক শক্তিকে খুব সহজেই দুর্বল করে দেয় এক নিমিষেই। বেচারা কোন রাস্তা বা উপায় খোঁজে পাচ্ছেন না তার কঠিন দুর্দিনে!

‘সেভ দ্যা হিউমিনিটি কক্সবাজার’ স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সংগঠনটি তার পার্শ্ববর্তী এক ভাইয়ের মারফতে বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়। রিক্সাচালক নুরুল আমিনের সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও উপদেষ্টা সদস্যদের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত ‘জরুরি ফান্ড ‘ গঠন করে। তার কন্যার বিয়ের আসবাবপত্র(ফার্নিচার) বাবৎ একটি খাট, একটি বেড ও একটি স্টীলের আলমিরা ব্যবস্থা করেন সংগঠনের উপদেষ্টা, নির্বাহী সদস্য ও শুভাকাঙ্খীদের আন্তরিক সহযোগিতায়।

স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সংগঠন ‘সেভ দ্যা হিউমিনিটি কক্সবাজার’ বিভিন্ন সামাজিক মানবিক কার্য সম্পাদক করে আসছে। সংগঠনটি মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এটি উক্ত সংগঠনের ২০ নং প্রজেক্ট। এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে যারা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন সংগঠনের নির্বাহী সদস্যগণ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং আগামীতেও সুন্দর সোনার বাংলাদেশ গড়তে পাশে থাকার আহবান জানান।