সংবাদদাতাঃ
গণমাধ্যমের কাছে ডাকাতের ছবি সরবরাহ করায় গত ২১ সেপ্টেম্বর দিনদুপুরে টেকনাফের হ্নীলার রঙ্গিখালীতে খুনের শিকার হন প্রবাসী মোঃ তৈয়ব।
এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ডাকাত গিয়াস উদ্দিনসহ তার বাহিনীর ২৭ জনের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলাও হয়েছে।
প্রকাশ্য দিবালোকে মতো স্পষ্ট একটি ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এখন উঠেপড়ে লেগেছে আসামিরা। তাদের নতুন মিশন, যেভাবে হোক বাদীপক্ষকে ফাঁসাতে হবে।
থানার কিছু দালালের সঙ্গে হাত করে মিথ্যা মামলার ফন্দি আঁটছে আসামিরা।
জলজ্যান্ত একটি জীবন শেষ করেও ক্ষান্ত হয়নি ডাকাতদল। তাদের টার্গেট এখন নিহত প্রবাসী মোঃ তৈয়বের পরিবারের সদস্যরা। খুনের ঘটনায় মামলা করে উল্টো হয়রানির শিকার। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের।
তৈয়বের মতো তার পরিবারের সদস্যরাও যেকোনো সময় খুনের শিকার কিংবা গুমের আশঙ্কা করছে।
এসব বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে অভিযোগ করেছেন খুনের ঘটনার মামলার বাদী দুদু মিয়া।
দুদু মিয়া, তার ছেলে জাকির হোসেন ও তৈয়বের মা ছলেমা খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, তৈয়বকে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে খুন করার পর এবার তারা আমাদেরকে ইয়াবা ও অস্ত্র দিয়ে ফাঁসাবে এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
তারা আরো বলেন, ‘ঘটনার মোড় ঘুরাতে শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলার আসামী লুৎফুর রহমানের একটি পরিত্যক্ত গোয়াল ঘর পুড়িয়ে দিয়ে মামলা সাজানোর কল্পকাহিনী করছে। এছাড়া মামলার ১নং আসামি গিয়াস উদ্দিন তৈয়বকে হত্যা করার আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন মর্মে কাগজপত্র তৈরী করেও মামলা করার পায়তারা করে আসছে। আমার ছেলে ৯ বছর মালেশিয়া ছিলেন। গত বছর দেশে আসার পর তাদের অব্যাহত হুমকি ধমকি এবং চাঁদা দাবীর কারণে অনেকটা ঘরছাড়া ছিল। অবশেষ তারা আমার ছেলেকে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে গুলি করে হত্যা করে।’
গত ২১ সেপ্টেম্বর রংগীখালী স্কুলপাড়া মসজিদের পাশে প্রকাশ্যে চিহ্নিত সন্ত্রাসী গিয়াস বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে ঘটনাস্থলে মারা যায় মো: তৈয়ব। ওই দিন বিকাল সোয়া ৩টার দিকে রংগীখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মসজিদ সংলগ্ন দোকানে বসা অবস্থায় স্থানীয় গুরা মিয়ার পুত্র গিয়াস উদ্দিন ওরফে দালাল গিয়াসের নেত্বত্বে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে গুলিবর্ষণ করে মো: তৈয়বকে নৃশংসভাবে খুন করে।
এ ঘটনায় হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-৬০ টেকনাফ মডেল থানা। জিআর-৮০০/২০। মামলায় আসামী করা হয়েছে ২৭ জনকে।
আসামীরা হলো- ঊলুচামরী কোনাপাড়ার মৃত রুহুল আমিনের ছেলে ডাকাত গিয়াস উদ্দিন, আনোয়ার হোছন প্রকাশ লেড়াইয়া, এরশাদ উল্লাহর ছেলে লুৎফুর রহমান, গোরামিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান প্রকাশ বাগাইস্সা, রেজাউল করিম প্রকাশ পুতিয়া, নাছির উদ্দিন, বোরহান উদ্দিন প্রকাশ আম্মুনি, ছমি উদ্দিনের ছেলে গোরা মিয়া, এরশাদ উল্লাহর ছেলে আবদুর রহিম, আবদুর রহমান বাগু, মৃত ইসমাঈলের ছেলে ইদ্রিস, মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে সরওয়ার কামাল, মৃত কবির আহমদের ছেলে বেলাল উদ্দিন, হুমায়ুন কবির, নজির আহমদের পুত্র শাকের আহমদ, মুফিজুর রহমান, মৃত আবদুর রশিদের পুত্র নুরুন্নবী, মৃত শফিকুর রহমানের পুত্র নুরুল আলম, কালাইয়া বৈদ্যের পুত্র রশিদ, তজুদ্দিনের পুত্র আমির হোসেন, আবুল মন্জুরের পুত্র আবদুর রহিম, মৃত আবদু সাত্তারের পুত্র সোনা মিয়া, নুরুল ইসলাম প্রকাশ মজুনার পুত্র মোহাম্মদ হোছন প্রকাশ বদাইয়া, কোনারপাড়ার মৃত আবুল হোছনের পুত্র নুরুল আমিন ডাকাত, গোরা মিয়ার পুত্র আবছার উদ্দিন, সালমান।
অজ্ঞাত রয়েছে ৫/৬ জন। মামলা করার পর আসামীরা মামলা তুলে নিতে নানান ধরনের হুমকি ছাড়াও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হবে বলেও অভিযোগ করেছেন হত্যা মামলার বাদী।
বাদী জানান, আসামিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় মামলার বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন বাদী দুদু মিয়া। তাহলে হয়তো তিনি তাঁর ছেলে হত্যার বিচার পেতে পারেন। আর না হয় উল্টো হুমকি-ধমকি এবং মামলার শিকার হয়ে হয়রানীর আশংকা রয়েছে।