তাসপ্রিয়া বিনতে কাশেম


হিজড়ারা ভিনগ্রহের প্রাণী নয়। তারাও পৃথিবীতে বসবাসরত সৃষ্টির সেরা জীব। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে লৈঙ্গিক পরিচয়ের জন্য সবচেয়ে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে হিজড়া সম্প্রদায়। নারীর অধিকার নিয়ে চারদিকে এখন বেশ সরব। কিন্তু লৈঙ্গিক রাজনীতির ফলে নারীর চেয়ে অধিক শোচনীয় জিবন যারা ভোগ করছেন তারা হলো হিজড়া সম্প্রদায়।

হিজড়া শব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ হিজরত বা হিজরি শব্দ হতে। যার অর্থ দাড়ায় পরিবর্তন। এছাড়াও ভদ্র সমাজে তাদের বৃহন্নলা, তৃতীয় লিঙ্গ, এসব শব্দে সম্বোধন করা হয়। ইংরেজিতে কখনো বলা হয় কমন জেন্ডার। কমন জেন্ডার শব্দটিকে আমার কেমন জনি যুক্তিযুক্ত মনে হয়। বাকি নামগুলোর সাথে লেপ্টে আছে ঘৃণা, এবং বৈষম্য।

মাতৃগর্ভে ভ্রুন নিষিক্তকরণ এবং বিভাজনের সময়, জেনেটিক্সের কারনে,অথবা সেক্স ক্রুমোজোমের কার্যত্রুটির কারনে হিজড়া সন্তানের জন্ম হয়। বায়োলজিক্যালি একজন হিজড়ার সাথে একজন নারীর পার্থক্য একটি মাত্র ক্রুমোজোমের, পুরুষের সাথেও তাই। একটিমাত্র কুমোজোমের পার্থক্যের কারনে যেমন পুরুষ প্রভু হয়ে উঠেনা।তেমনি নারী ও মহান হয়ে উঠেনা। সেভাবে কাউকে সভ্য সমাজ হতে ছুঁড়ে ফেলাটা পাশবিক অন্যায়।

নারীরা কখনো কখনো পুরুষ হয়ে জন্ম না নেবার জন্য আফসোস করে। একজন হিজড়ারা সম্ভবত আফসোস করে কুকুর কিংবা বিড়াল হয়ে না জন্মানোর জন্য।তাদের অনুভূতি নারী পুরুষের মতোই।তারা সন্তান জন্মদানে অক্ষম।এটাই তাদের সমাজ হতে বিতাড়িত হবার প্রধান কারন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, তারা শারীরিক প্রতিবন্ধিদের চেয়ে অনেক ভালো। সুযোগ পেলে তারা আমার আপনার মতো ভালো কিছু করে দেখাতে পারে নিমিষেই।সামাজিকভাবে এত নিগ্রহের পরেও তাদের অনেক প্রতিভা লক্ষ করার মতো।পুঁজিবাদি সমাজ এগিয়েছে নারীদের সন্তান জন্মদানের যন্ত্র হিসেবে পুঁজি করে। হিজড়াদের সম্ভবত এ ব্যবস্থার কারেনেই বলির পাঠা হতে হয়েছে।

তারা সাধারনত নারীদের পোশাক পরিধান করে। বিয়ে বাড়িতে নাচ,গান, কিংবা চাঁদা তুলেই মূলত তারা জিবন নির্বাহ করে। অনিশ্চিত কিংবা বাধ্য হয়েই এমন জিবন তাদের।

সভ্য দেশগুলোতে হিজড়া বা কমন জেন্ডার মূলধারা সাথে মিশে গেলেও, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোতে তাদের মানুষ বলে গ্রাহ্য করেনা সমাজ। বাংলাদেশের সংবিধানের
১৫ (ঘ) ধারায় হিজড়াদের অধিকারে কথা বলা হলেও তার অস্তিত্ব কেবল সংবিধানেই সিমাবদ্ধ।
ফৌজদারি আইন ৩৭৭ ধারা অনুসারে হিজড়াদের বিয়ে নিয়ে নানা বিধিনিষেধ আছে। তবে কারো শারীরিক অধিকার নিয়ে বিধিনিষেধ করার অধিকার কেউ রাখেনা।
হিজড়াদের কবর দেওয়ার সময় লবন আর ফুল দেওয়া হয়। এখানেও তাদের প্রতি ভিন্ন মানসিকতা।

হিজড়া সম্প্রদায়ের অধিকার ও নারী আন্দলনের অংশ হোক। বলা হয়ে থাকে,পৃথিবীর কোন সমাজ কত উন্নত তা বোঝা যায়, ঐ সমাজের একজন নারীর জিবন উন্মোচনের মাধ্যমে। নারীরা না হয় অভিনয় করে বাঁচতে পারে। হিজড়ারা তো জন্মের দোষে তাও পারেনা। ঘৃণা আর অবহেলার বস্তুু হয়ে বাঁচে। আবার কেউ কেউ এই বাঁচা হতে মুক্তি পেতে মরে গিয়েই বাঁচতে চায়। তারা ছেড়ে দিয়েই জিতে যায়।