তাওহীদুল ইসলাম নূরী


আজ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ শ্রদ্ধেয় নানা মরহুম হযরত মাওলানা আবুল হাশেমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। সময় যে কীভাবে চলে যায় বুঝা বড় দায়। এক বছরের এই সময়টা কেমনে গেল টেরই পেলাম না। মনে হচ্ছে এই তো সে দিন নানাকে হারিয়েছি।

মিষ্টভাষী, তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন, সৃজনশীল মনোভাবাপন্ন শ্রদ্বেয় নানার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো ভুলতে পারি না কিছুতেই। বিশেষকরে জীবনের শেষ সময়ে তাঁর সাথে অতিবাহিত সময়গুলো খুব বেশি আমাকে নাড়া দেয়, কাঁদায়। তাই তো আজও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ” নানা আর নেই “।
ধর্মীয় জ্ঞান, রাজনীতি সচেতনতা, দুরদর্শিতাসহ প্রভৃতি গুণের সমন্বয় ছিল তার মাঝে। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তার স্মৃতিশক্তি দেখে অবাক হয়েছে সবাই, আজও যেটা অনেকে বলে বেড়ায়। প্রতিটি আলাপচারিতায় যে কথাগুলো বলতেন, উদাহরণ এবং যুক্তি দিতেন তার সবটাই ছিল যেমন চমকপ্রদ, তেমনি শিক্ষণীয়। যে কেউ অল্পক্ষণ তার সাথে কাটালেই বুঝতে পারতেন তিনি সাধারণ কেউ নন। বরং তিনি সাধারণের মধ্যে অনন্য একজন।

চকরিয়া উপজেলার আজকের শাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা তিনিই। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম নিয়ে ইউনিয়নটি প্রতিষ্ঠা যেমন ছিল কল্পনাতীত, তেমনি দুঃসাধ্য। নিজের মেধা, সৃজনশীলতা, দুরদর্শিতা, একাগ্রতা এবং অক্লান্ত ত্যাগই সেদিন তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছিল। দেশের মানুষ বিশেষ করে নিজ গ্রামের মানুষের জন্য নানার চিন্তা ছিল সবসময়। তার মৃত্যু হয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর। আর মৃত্যুর মাত্র ০৫ দিন আগে আমাকে শয্যায় শায়িত অবস্থায় বুকে জড়িয়ে বলে ” ও ভাই, তুই শাহারবিলকে কখনো পিছ দিস না”। এলাকার একটা মসজিদের আমরণ সভাপতি ছিলেন তিনি। সেদিন (১৩ সেপ্টেম্বর) সেই মসজিদটি নির্মাণের জন্য আমাকে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেন তখন। মৃত্যুর মাত্র দুই দিন আগেও (১৬ সেপ্টেম্বর) এই একই কথাগুলো বলেন তিনি। অবশ্য এটাই ছিল নানার সাথে শেষ কথা আমার। একটা জিনিস সবচেয়ে অবাক লাগে সেটা হচ্ছে জীবনের শেষ সময়েও তার নামাজ আদায় এবং স্মৃতিশক্তি দেখে। তাইতো আমার মনে হয় শ্রদ্বেয় নানার মৃত্যুতে জাতি এমন একজন আলেম এবং সমাজসেবককে হারায় যে শূন্যতা পূরণ হওয়া যুগ কিংবা শতাব্দী সাপেক্ষ। আর নতুন প্রজন্মের উচিত তাঁর জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি কল্যাণময় জীবনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া।

আসলে অনেক স্মৃতি, অনেক প্রীতি। ভুলতে পারি না ওখানের কিছু স্মৃতি। বিশেষকরে মৃত্যুর মাত্র ০৫ দিন আগের স্মৃতিটি প্রায়ই মনে পড়ে। ১২ সেপ্টেম্বর রাতে আমি নানার সাথেই ছিলাম। যখন ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে চলে আসতে চাইছিলাম তখন তিনি আমাকে আসতে দিতে সম্পূর্ণ নারাজ। পরে উপরোল্লিখিত কথাগুলো বলে দুই হাত তুলে সেই শয্যারত অবস্থা থেকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে কেঁদে কেঁদে আমার জন্য দোয়া করেন। সেই স্মৃতি, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন আজও মনে পড়ে তখনই মনের অজান্তে চোখ দিয়ে অশ্রু গড়ায়। নানাকে হারিয়ে যে কষ্ট অনুভব করেছি সেটা যেমন লিখে প্রকাশ করতে পারি না, তেমনি বলে প্রকাশ করতেও আমি বরাবরই অক্ষম। বাবাকে হারিয়েছি মাত্র সাত বছর বয়সে। আর নানাকে হারিয়েছি ২৩ বছরে এসে। তাই স্বভাবতই বাবার চেয়ে নানার সাথে স্মৃতি বেশি। যে স্মৃতিগুলো আজ আমায় খুব বেশি পীড়া দেয়, সময়ে অসময়ে গভীরভাবে নাড়া দেয়। ধর্মীয় কোন উৎসব কিংবা আত্মীয়স্বজনের কোন অনুষ্ঠান হলেই নানার শূন্যতা গভীরভাবে অনুভব করি। যেটা কখনো কাউকে দিয়ে পূরণ করার নয়।

নানা আজ নাই। আছে তার অজস্র, অসংখ্য স্মৃতি। মৃত্যুর এক বছর পেরিয়ে আজ দুই বছরে পা রাখছে তার গত হওয়ার ক্ষণ। জানি না এই দীর্ঘ সময় নানা কেমন আছেন সেই অজানায়। দোয়া করি “আল্লাহ যেন শ্রদ্বেয় নানার জীবনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে তাকে জান্নাত দান করেন। নানার শরীরে বেহেশতের পোশাক জড়িয়ে দেন”। আল্লাহ যেন নানার জীবনের সকল গোনাহ ক্ষমা করে তাকে জান্নাত দান করেন সকলের কাছে আল্লাহর দরবারে আমার মত এই একই দোয়ার একান্ত প্রত্যাশায় থাকলাম,…

স্মৃতিচারণেঃ
তাওহীদুল ইসলাম নূরী
শাহারবিল সদর, চকরিয়া, কক্সবাজার।