সিবিএন ডেস্ক:
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের ভূমিকায় বাংলাদেশ অত্যন্ত হতাশ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের বিষয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে এ কথা জানান তিনি।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা আরও স্বচ্ছ ও দক্ষ জাতিসংঘ চাই, যেখানে জরুরি প্রয়োজনে জাতিসংঘ আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। তবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জাতিসংঘের ভূমিকায় আমরা অত্যন্ত হতাশ।

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তিতে বৈশ্বিক সংস্থাকে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। বিশেষ করে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্র নয়, মানুষের কল্যাণে প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতিসংঘের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে অনেকের মাঝে হতাশা রয়েছে। ওয়েবিনারের কর্ম অধিবেশনে বক্তারা এই অভিমত দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মাদ শহীদুল হক।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) ও জাতিসংঘ যৌথভাবে ‘জনগণের প্রয়োজনের সময়ে জাতিসংঘ: বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা নিয়ে পুনর্ভাবনা’ শীর্ষক দুই দিনের ওই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

দুই দিনের ওয়েবিনারের দ্বিতীয় দিনে নাগরিক সমাজের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রথম কর্ম অধিবেশনে আলোচনা হয়।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘জাতিসংঘে এক ধরনের পরিবর্তনের সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে সব দেশ একইভাবে এই পরিবর্তনে যুক্ত হচ্ছে না। অনেক দেশ দায়িত্বশীল ও সহযোগী হয়ে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকছে। আবার কোনও কোনও দেশ বাধাও সৃষ্টি করছে। ফলে জাতিসংঘ এখনও অন্তর্বর্তীকালীন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে এসে ভাবার সময় এসেছে কোথায় আমরা যেতে চাই।’

জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা অবশ্যই বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল। তবে আমরা আরও স্বচ্ছ ও দক্ষ জাতিসংঘ চাই। যেখানে জরুরি প্রয়োজনে জাতিসংঘ আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। যাতে সদস্য দেশের প্রত্যাশা পূরণ হয়। তবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জাতিসংঘের ভূমিকায় আমরা অত্যন্ত হতাশ।’

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের বর্তমান কাঠামো যে যথেষ্ট কার্যকর নয়, সেটা নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাধিকার হোক, প্রবল শক্তিধর দেশগুলোর দ্বৈরথই হোক না কেন, কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বললে জানবেন জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে তারা হতাশ। কারণ, তৃণমূলে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের সহায়তা করলেও মূল সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ স্পষ্ট কোনও পথনকশা দিচ্ছে না।’

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট সমরি শরন বলেন, ‘বর্তমান দুনিয়া হচ্ছে এশিয়ার দুনিয়া এবং জাতিসংঘে এশিয়ার সঠিক প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। ’

এশিয়ার দেশগুলোকে জটিলতা দূর করে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চীন ও ভারত এবং অন্যান্য দেশ একসময় সংলাপে বসবে এবং নিজেরা বিষয়টি সমাধান করবে।’

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘তরুণদের নেতৃত্বে নাগরিক সমাজের কর্মকাণ্ড বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ নানা ইস্যুতে তাদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো।’

তার মতে, নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। কারণ, তারা কথা বলতে পারেন জাতিসংঘের মধ্যে। জাতিসংঘের সদস্য দেশের গরিব মানুষের কণ্ঠ তখনই শোনা যায় যখন ওই দেশ তাদের দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা করে। কাজেই শেষ পর্যন্ত সদস্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, সদস্য দেশে যদি নাগরিক সমাজের জন্য কাজের ক্ষেত্র না থাকে, তবে জাতিসংঘের করিডোরে কীভাবে তারা সুযোগ পাবে।’

পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, ‘বড় তহবিল থাকার কারণে বড় বড় এনজিওগুলো জাতিসংঘের প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছে না। তহবিলের সংকট থাকায় ছোট ছোট এনজিওগুলো জাতিসংঘের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারছে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘জাতিসংঘের খোলনলচে পরিবর্তনের সময় এসেছে।’

ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিঙ্ক বলেন, ‘মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখার স্বার্থে জাতিসংঘকে কাঠামো নয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এই প্রেক্ষাপট থেকে ইইউ সেই শূন্যতা পূরণের জন্য কাজ করছে।’

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআইয়ের নীতি পরামর্শক আনিস চৌধুরী বলেন, ‘জাতিসংঘ এবং এর সংস্থাগুলো বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশের জনগণের জন্য সহজভাবে ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি তৈরি করতে সহায়তা করছে। ’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাতিসংঘকে মানুষকেন্দ্রিক হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে।’

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ভূ-রাজনীতি ও আঞ্চলিক বিষয়ক এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় কেন্দ্রের প্রধান শেখ তানজীব ইসলাম বলেন, ‘সরকারের ওপর অনেকের বিশ্বাস আছে। কিন্তু তারা ঠিকমতো সেবা দিতে পারে না। আবার বেসরকারি খাতের ওপর কারও বিশ্বাস নেই, কিন্তু তারা সেবা প্রদান করছে এবং এ দুটি বিষয় নিয়ে জটিলতা আছে।’

অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড অ্যাসোসিয়েশন ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট স্যামি ওয়াদুদ বক্তব্য রাখেন।