আবদুর রহমান খান :
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) প্রধানের মধ্যে আজ রবিবার থেকে ছ’দিন ব্যাপী নির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল হয়ে গেছে।
বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকটি পূর্ব নির্ধারিত সময় সূচি আনুযায়ী আজ রাজধানীর পিলখানা বিজিবি সদর দপ্তরে আনুষ্ঠানিক শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিএসএফ প্রতিনিধি দল ঢাকা আসতে না পারায় বৈঠকটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা টু নয়াদিল্লি-কলকাতা টু ঢাকা সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকার প্রেক্ষিতে আসন্ন বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে যোগদানের জন্য বিএসএফ প্রতিনিধিদল তাদের নিজস্ব এয়ার ক্রাফট নিয়ে ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত সময়ে বিএসএফের এয়ার ক্রাফটের কারিগরি সমস্যার কারণে বিএসএফ প্রতিনিধিদল আজ ঢাকায় আসতে পারছেন না। এ প্রেক্ষিতে পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আজ থেকে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না এবং পরিবর্তিত সময়সূচি এখনো নিশ্চিত করা যায়নি বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিশেষ বিমানে চেপে দু’দিনের আকস্মিক সফরে ঢাকা এসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচীবের সাথে কথা বলে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচীব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। সেটা যেমন ভারতে আগ্রহের বিষয় ছিল; তেমনি এবারের সীমান্ত বাহীনী প্রধানদের ঢাকা বৈঠকটি ভারতের আনাগ্রহের কারনে বাতিল হয়েছে বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
তাছাড়া, এয়ারক্রাফটে যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে বিএএসএফ প্রধান ঢাকা আসতে পাবেন না এটাকে হাস্যকর যুক্তি বলে মনে করছেন অনেকেই। কারণ, বিএ এফ-এর কাছে ঢাকা আসার জন্য মাত্র একখানা এয়ারক্রাফট আছে এটা বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি নয়।
রাজনৈতিক মহল ধারনা করছেন, পাকিস্তান ও চীনের সাথে ভারতের চলমান সীমান্ত উত্তেজনার মাঝে বাংলাদেশের সাথে এরকম ছ’ মাস অন্তর অন্তর নিধরিত নিয়মিত বৈঠকের এবারের পালাটি বাতিল করার পেছনে নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ন কিছু বিষয় রয়েছে।
এ প্রসংগে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীবাহিনী সাবেক বিডিআর-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব: ) ফজলুর রহমান এই প্রতিবেককে বলেন, দু’দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর মধ্যে পূর্ব নির্ধারিত রুটিন বৈঠকটি ভারতের দিক থেকে বাতিল করা হয়েছে বলে ধরণা করা হচ্ছে।
তিনি মনে করেন, চীন-ভারত উত্তেজনার মাঝে ভারতের পক্ষে বাংলাদেশ প্রকাশ্যে কোন কথা বলছে না বা এ সময় হঠাৎ করে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের দরহম মরহম বেড়ে যাওয়াটাও বোধহয় ভলো চোখে দেখছে না ভারত। সীমান্ত বৈঠক বাতিলের পেছনে এটাও কোন কারণ হতে পারে ।
তাছাড়া, বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ কোন মারনাস্ত্র ব্যবহার করবে না বা বেসামরিক লোকদের গুলি করে হত্যা করবে না – এমন অঙ্গীকার বার বার দেবার পরও সেটা কার্যকর করা হচ্ছে না। তা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগকে আমলে না নেবার বিষয়টিও এবারের বৈঠকে বিএসএফের জন্য বিব্রতকর হতে পারে এমনটি ও ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চলতি সেপটেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বিএসএফ অন্তত: তিনজন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিশ কেন্দ্রের তথ্য আনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে গত আগষ্ট মাস পর্যন্ত আট মাসে বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ ৩৫ জন বাংলাদেশী বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ২৯ জন নিহত হয়েছে বিএএফ-এর গুলিতে। এ ছাড়া পিটিয়ে ও নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ছ’জনকে এবং আহত করা হয়েছে ১৭ জনকে। এ আট মাসে বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা থেকে ২০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে অপহরন করে নিয়ে গেছে। তাদেরর মধ্যে ৫ জনকে পরে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। ##