মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার শহরের জিরো পয়েন্টের ‘হলিডে মোড়-বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাস টার্মিনাল) প্রধান সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণের কাজ সহসায় শুরু হচ্ছেনা। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিজনিত অর্থনৈতিক মন্দার কারণে উন্নয়নের জন্য গৃহীত দেশের সড়ক গুলোকে সরকার ৩টি শ্রেণিতে যথাক্রমে অগ্রাধিকার-১, অগ্রাধিকার-২ এবং অগ্রাধিকার-৩ শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে। অগ্রাধিকার-১ শ্রেণির সড়কগুলো উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অর্থ বরাদ্দ এবং অগ্রাধিকার-২ শ্রেণির সড়কগুলো উন্নয়নে সম্ভব হলে চলতি ২০২০-২০২১ কিছু অর্থ বছরে বরাদ্দ দেওয়া হবে। আর অগ্রাধিকার-৩ শ্রেণিতে থাকা সড়কগুলোর উন্নয়নে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে আপাতত কোন অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবেনা। হলিডে মোড়-বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাস টার্মিনাল) প্রধান সড়ক সংস্কার ও প্রসস্তকরণ প্রকল্পটি অগ্রাধিকার-৩ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এজন্য চলতি অর্থ বছরে অর্থাৎ আগামী জুনের মধ্যে এ সড়কটি উন্নয়নে কোন অর্থ বরাদ্দ হওয়ার সম্ভবনা না থাকায় সড়কটির উন্নয়ন কাজও সহসায় শুরু হচ্ছেনা। এ কারণে সহসায় কমছেনা কক্সবাজারের দুর্ভাগা মানুষের প্রধান সড়ক নিয়ে চরম দুর্ভোগ। কাটছে না কক্সবাজার জেলা শহরের প্রধান সড়ক’টির শনির দশা।

সড়কটি উন্নয়নের দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমেদ (এলডিএমসি-পিএসসি) হলিডে মোড়-বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাস টার্মিনাল) প্রধান সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পটি অগ্রাধিকার-৩ প্রকল্প থেকে অগ্রাধিকার-২ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে পর পর ৩টি পত্র গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে পত্রগুলোর এখনো কোন ইতিবাচক সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তিনি আরো জানান, এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এর সাথে তিনি সাক্ষাত করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সচিবকে সড়কটি অগ্রাধিকার-৩ প্রকল্প থেকে অগ্রাধিকার-২ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করার জন্য এ সংক্রান্ত ফাইলটি স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে প্রদান করছেন বলে কউক এর চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমেদ জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সড়কটি অগ্রাধিকার-৩ প্রকল্প থেকে প্রথমে অগ্রাধিকার-২ প্রকল্পে এবং পরে সেখান থেকে সম্ভব হলে অগ্রাধিকার-১ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তিনি প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০১৭ সালের ১৯ মার্চ রাস্তাটি টেকসই ও নান্দনিক উন্নয়নের জন্য কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে রাস্তাটি কউক নিয়ে নেয়। কক্সবাজার শহরের জিরো পয়েন্ট ‘হলিডে মোড়-বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাস টার্মিনাল) সড়ক সংস্কার ও প্রসস্তকরণ’ নামক কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) পরিকল্পনায় তৈরীকৃত প্রকল্পটি ২শত ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরে বিগত ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। এরপর প্রশাসনিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়। প্রকল্পটির কাজ শুরু করে শেষ করা পর্যন্ত ৩ বছর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। সড়কটি হলিডে মোড় থেকে বাজারঘাটা হাসেমিয়া মাদ্রাসার উত্তর পশ্চিমে ব্রীজ পর্যন্ত যেভাবে আছে সেভাবে ২লেনে এবং একই ব্রীজের পূর্ব পার্শ্ব হতে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ৪লেনে উন্নীত করা হবে। ৪লেনে ডিভাইডার থাকবে। ২ লেনে কোন ডিভাইডার থাকবে না। পুরো সড়কের উভয় পার্শ্বে ড্রেন এবং স্লাব থাকবে। ২৫৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে ২০০ কোটি টাকা সড়কের উন্নয়নে এবং অবশিষ্ট ৫৮ কোটি টাকা সৌন্দর্য বর্ধন বৈদ্যুতিক লাইন সরানো, ফুটপাত নির্মাণ, প্রধান সড়ক থেকে সংযুক্ত বিভিন্ন অলিগলির ১০০ থেকে ২০০ ফুট পর্যন্ত ড্রেনের উন্নয়ন সহ বিবিধ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, হলিডে মোড় থেকে খুরুস্কুল রাস্তার মাথা পর্যন্ত ডাব্লিউ-১ এবং খুরুস্কুল রাস্তার মাথা থেকে পূর্বে লারপাড়া (বাস টার্মিনাল) পর্যন্ত ডাব্লিউ-২ নামে প্রকল্পটিকে পৃথক ২ভাগে বিভক্ত করে ই-জিপি প্রক্রিয়ায় টেন্ডার আহবান করা হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী না থাকায় দাখিলকৃত টেন্ডারের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় টেন্ডার অনুমোদন না করে কিছু অত্যাবশ্যকীয় শর্তাবলীর ব্যাখ্যা চেয়ে গত ৭ জুলাই ফাইলটি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। সেটি আবার মন্ত্রণালয় থেকে কউক এ পাঠানো হলে কউক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চাহিত তথ্যের ব্যাখ্যা দিয়ে গত ৩০ জুলাই ফাইলটি আবারো গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করে। যদি ফাইলটির বিষয়ে আর কোন ব্যাখ্যা চাওয়া না হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় হতে ফাইলটি আগামী অক্টোবরের মধ্যে অনুমোদন হয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আসার সম্ভবনা রয়েছে। তখন নির্বাচিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২টিকে ২৮ দিনের সময় দিয়ে কাজ সম্পাদনের ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দেওয়ার জন্য এওয়ার্ড দেওয়া হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দেওয়ার পর পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের প্রথম দিকে নির্বাচিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২টিকে কার্যাদেশ দেওয়া হতে পারে। কিন্তু সড়কটি অগ্রাধিকার-৩ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত থাকায় প্রকল্পের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। তাই আরো ন্যূনতম ৩ মাস পর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সড়কটি উন্নয়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২টিকে কার্যাদেশ দেওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও অর্থের অভাবে কাজ শুরুর সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীন। কারণ কাজ শুরু করে পুরাতন সড়কটি খুলে ফেললে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা নাহলে তখন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবার কাজ বন্ধ করে দিতে পারে। এ অবস্থায় এ সড়ক দিয়ে চলাচলে জনগণকে আরো চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

কউক এর চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমেদ জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ থেকে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত ৭ম দফায় জরাজীর্ণ প্রধান সড়কটির সাময়িক সংস্কার ও মেরামত কাজ করা হয়েছে। চলাচলে জন দুর্ভোগ লাঘবে বার বার প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হচ্ছে। সড়কটির কাঙ্খিত উন্নয়নে তিনি ‘নাছোড়বান্দা’ বলে জানান। এজন্য, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে তিনি প্রকল্পটির পেছনে সার্বক্ষনিক লেগে আছেন।