মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসজনিত ভয়ংকর পরিস্থিতিতে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সদস্যরা শত ঝুঁকি উপেক্ষা করে সারা দেশের মতো দীর্ঘ গত সাড়ে ৪ মাস ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার জেলার নাগরিকদের। জেলা পুলিশ নুতুনরূপে জনবান্ধব ও প্রকৃত সেবামুখী একটি বাহিনী হিসাবে নিজেদের উন্মোচিত করতে সক্ষম হয়েছে এ সময়ের মধ্যে। নিজের ও পরিবার পরিজনের কথা মাথায় নারেখে করোনা সংকটে নাগরিকদের সেবা দিতে গিয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশও করোনার ভয়ংকর থাবা থেকে রেহাই পায়নি। করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে কক্সবাজার জেলাবাসীকে নিরন্তর মানবিক সেবা দিতে গিয়ে অনেকটা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ।

১৯ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন-মোট ১৩৮ জন কক্সবাজার জেলা পুলিশের সদস্য। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম গত ১৭ মে করোনা ‘পজিটিভ’ হন পেকুয়া থানার কনস্টেবল এরশাদ। ১৩৮ জনের মধ্যে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সদস্য, কোভিড যোদ্ধা কনস্টেবল ছোটন দেব (২৯) পরলোকগমন করেছেন। গত ১৫ জুলাই ভোর রাতে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফ্রন্ট লাইনার ছোটন দেব পরলোকগমন করেন।

পরলোকগমনকৃত কক্সবাজার জেলা পুলিশের সদস্য কনস্টেবল করোনা যুদ্ধের বীর সেনানী ছোটন দেব চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বাতাজুড়ি, ধামদর হাট এলাকার সাধন দেব এর পুত্র। কনস্টেবল ছোটন দেব সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত ১০ জুন করোনা ‘পজিটিভ’ হন। ছোটন দেব ২০১১ সালের ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। কক্সবাজার জেলা পুলিশের সদস্য কনস্টেবল ছোটন দেব ছিলো করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরনকারী বাংলাদেশ পুলিশের ৫৩ তম ফ্রন্ট যুদ্ধের বীর সেনানী।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মধ্যে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যায় আক্রান্ত হয়েছেন কনস্টেবল পদবীর ৭৬ জন সদস্য। এছাড়া জেলা পুলিশের আক্রান্ত হওয়া অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১ জন, পরিদর্শক ৬ জন, এসআই, সার্জেন্ট ও টিএসআই পদবীর ২৩ জন, এএসআই ও এটিএসআই পদবীর ২৩ জন, নায়েক ৭ জন ও জেলা পুলিশের সিভিল স্টাফ ২ জন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোছাইন সিবিএন-কে এ তথ্য জানিয়েছেন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) জানান, অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আক্রান্তদের থেকে ৫ জন পুলিশ সদস্যকে ঢাকাস্থ রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে প্রেরণ করে সেখানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ কোভিড যুদ্ধে ২ টি এম্বুলেন্স ব্যবহার করছে। তারমধ্যে, ১টি এম্বুলেন্স শুধু জেলার করোনা আক্রান্ত নাগরিকদের আনা নেওয়ার সেবা দিতে ব্যস্ত এবং আরেকটি জেলা পুলিশের করোনা আক্রান্ত সদস্যদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) আরো বলেন, কক্সবাজারে ২ টি আবাসিক হোটেল ভাড়া নিয়ে জেলা পুলিশের যেসব সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়ে শরীরে উপসর্গ নেই তাদেরকে রাখা হচ্ছে। অপর হোটেলটি পুলিশ সদস্যদের কোয়ারান্টাইনে রাখাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি আরো জানান, পুলিশের দায়িত্ব মানেই মানুষের সরাসরি সংস্পর্শে যাওয়া। তারপরও জেলা পুলিশের সদস্যরা আসামী ধরতে, চেকপোস্ট ও কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সব ধরণের দায়িত্ব পালন করছেন চরম ঝুঁকি উপেক্ষা করে কাজ করছেন। দেশে করোনা আক্রমনের শুরু থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে জেলা পুলিশের সদস্যদের দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) বলেন, এত সতর্কতার পরও মানবিক ও পেশাদারীত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের একজন সদস্যকে হারিয়েছি এবং ১৩৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, ৪৫ জন পুলিশ সদস্য জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল, পুলিশ লাইন ও বাসায় আইসোলেশনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ৯৩ জন পুলিশ সদস্য ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলা পুলিশের ৫৮৭ জন সদস্যের স্যাম্পল টেস্ট করে ১৩৮ জনের দেহে করোনা ভাইরাস জীবাণু সনাক্ত করা হয়। এছাড়া কোয়ারান্টাইন পালন করছেন ৯৫ জন পুলিশ সদস্য। জেলা পুলিশের করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে সকলেই পুরুষ পুলিশ সদস্য বলে জানান, কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও এডিশনাল এসপি (এডমিন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন।